জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেছেন, বছরের পর বছর রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশ এবং এ দেশের জনগণ নিঃসন্দেহে ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে ক্যাম্পে বন্দি জীবনের কারণে রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ দিন দিন অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।
সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া এক বিবৃতিতে ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেন, বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা আজও মানবিক সহায়তার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। তাদের অধিকাংশেরই ক্যাম্পে কাজ করার সুযোগ নেই, আর এর ফলে তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন হয়ে পড়েছে একঘেয়ে ও নিরাপত্তাহীন।
তিনি জানান, ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অর্ধেকের বেশি ১৮ বছরের নিচে। এদের মধ্যে শিক্ষার অভাব, কাজের সুযোগ না থাকা এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা তাদের চরম হতাশার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ফলে অনেকেই বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, কেউ সমুদ্র পথে পাড়ি দিচ্ছে, কেউ আবার ভুল পথে ঝুঁকি নিচ্ছে।
বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে রাখাইন রাজ্যের সংঘাত নিরসনে নেওয়া কূটনৈতিক উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তার মতে, সেখানে একটি টেকসই সমাধান খোঁজার প্রয়াস চালানো হচ্ছে, যা বর্তমান বাস্তবতায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি জানান, বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে এই শরণার্থীদের যোগাযোগ অবিচ্ছিন্ন। তারা জানে কোথায় কোন সুযোগ আছে, কেমন জীবনযাপন সম্ভব। ফলে তারা সহজেই প্রলোভনে পড়তে পারে বা ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যা ভবিষ্যতে আরও সংকট তৈরি করতে পারে।
তিনি রাখাইনে সহিংসতা ও নতুন করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে এই পরিস্থিতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও তাদের নিরাপদ ভবিষ্যৎ গঠনের পথে বড় বাধা হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন।
জাতিসংঘ হাইকমিশনারের এই বক্তব্যে আবারও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, রোহিঙ্গা সংকট একটি দীর্ঘমেয়াদী ও বহুমাত্রিক সমস্যা, যার সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ সরকারের সক্রিয় কূটনৈতিক ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাতিসংঘের এমন বার্তা বিশ্ববাসীকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে অনুপ্রাণিত করবে এবং সংকট সমাধানের পথে নতুন আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত করবে।