প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৫, ১৪:৫৮
কোনো ট্যাগ পাওয়া যায়নি
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনা শেষ পর্যন্ত ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলায় ব্যাপক প্রাণহানি হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ জুন) ভোররাতে ইরান ও ইসরায়েল পরস্পরের ভূখণ্ডে আঘাত হানে, এতে দুই পক্ষের বহু মানুষ হতাহত হয়। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও সিএনএন এ তথ্য জানিয়েছে।
ইসরায়েলি অধিকৃত অঞ্চলে ইরান একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যার ফলে অন্তত চারজন নিহত ও ২২ জন আহত হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে বহু ভবন ধসে পড়ে এবং ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে এলাকাগুলো। ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা এমডিএ জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোতে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে রাতভর অভিযান চালানো হয়।
অন্যদিকে, একই দিন ইরানের গিলান প্রদেশে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ৯ জন নিহত হয়, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। হামলায় চারটি আবাসিক ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে আহতদের উপচে পড়া ভিড় সৃষ্টি হয়, আর রক্তদানের আহ্বান জানানো হয়।
এই সংঘাতের পটভূমিতে রয়েছে গত ১৩ জুন ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’। ওই অভিযানে ইরানের রাজধানী তেহরানসহ একাধিক সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। এতে উচ্চপর্যায়ের সেনা কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীসহ পাঁচ শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়, যা তেহরানের ক্ষোভকে আরও উসকে দেয়।
জবাবে ইরান ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩’ শুরু করে। ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেদ করে সরাসরি সামরিক ঘাঁটি ও প্রশাসনিক স্থাপনায় আঘাত হানে। যদিও হতাহতের সংখ্যা কম, তবুও ক্ষয়ক্ষতির দিক দিয়ে ইসরায়েলকে বড় ধাক্কা খেতে হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এই সংঘাতে আরও জটিলতা তৈরি করেছে। ২১ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান কাতার ও ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।
এসব উত্তেজনার মধ্যেই সোমবার রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, ইরান ও ইসরায়েল একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে ইরানের পক্ষ থেকে এ দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং ইসরায়েলও নিরব থাকে।
অবশেষে মঙ্গলবার দুপুরে একযোগে ইরান, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। তবে তার আগেই ঘটে যায় রক্তাক্ত পাল্টাপাল্টি হামলা, যা যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎকে ঘোলাটে করে তুলেছে।