প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫, ১২:১৫
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার একসঙ্গে পাওয়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফের ২৭ বিলিয়ন ডলারের ওপরে উঠেছে। মঙ্গলবার দিন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গ্রোস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার এবং বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে তা ২২ দশমিক ২৫ বিলিয়নে পৌঁছেছে। এছাড়া বর্তমানে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভও প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলারের ঘরে রয়েছে, যা দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় নির্বিঘ্নে চালানো সম্ভব। এই অর্থের সংযোজন দেশের অর্থনীতিতে স্বস্তি আনলেও রিজার্ভ পরিস্থিতি ঘিরে উদ্বেগ এখনো পুরোপুরি কাটেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, আইএমএফের এই ঋণ অনুমোদনের মাধ্যমে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করবে এবং দুর্বল জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা জোরদার হবে। সোমবার রাতে ওয়াশিংটনে আইএমএফ সদর দপ্তরে বৈঠকে তৃতীয় ও চতুর্থ রিভিউ অনুমোদিত হওয়ার পর পরদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে এ অর্থ যুক্ত হয়। চলতি মাসের শুরুতে রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার, ফলে এই নতুন সংযোজন কিছুটা স্থিতিশীলতা ফেরালো।
২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে, যা পরবর্তীতে সরকারের ব্যর্থতা, অর্থপাচার, আমদানি খরচ বৃদ্ধিসহ নানা কারণে কমতে থাকে। বাংলাদেশ ২০২২ সালের জুলাইতে আইএমএফের কাছে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের আবেদন করে, যার প্রথম কিস্তি পাওয়া যায় ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এরপর পর্যায়ক্রমে আরও কিস্তি পাওয়া যায়, এবং সর্বশেষ ১৩০ কোটি ডলার একসঙ্গে পাওয়ায় মোট প্রাপ্তির পরিমাণ দাঁড়াল ২৩১ কোটি ডলারে।
এই ঋণের আওতায় রয়েছে ইসিএফ, ইএফএফ এবং আরএসএফ ফান্ড থেকে তহবিল, যার মধ্যে রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটিতে বাংলাদেশ এশিয়ায় প্রথম ঋণপ্রাপ্ত দেশ। রিজার্ভ সংকট মোকাবিলায় এবং টাকার মান ধরে রাখতে এই অর্থ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকেরা। তবে এই ঋণ ব্যবহারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা না গেলে ভবিষ্যতে আরও চাপ তৈরি হতে পারে বলেও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন।
উল্লেখ্য, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রিজার্ভ ১৪ বিলিয়নের নিচে নেমে এসেছিল, যা দেশের আমদানি সক্ষমতা ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে চরম সংকট তৈরি করেছিল। তখন ডলার বিক্রি করে রিজার্ভ টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ রেখে বিকল্প উৎস থেকে সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। নতুন গভর্নরের অধীনে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৌশলগত পরিবর্তনের ফলে সাম্প্রতিক ঋণ সংযোজন ও রিজার্ভ বৃদ্ধিকে ইতিবাচক পরিবর্তন হিসেবে দেখছেন অনেকেই।
এই পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলোতে দেশের আমদানি-রপ্তানি ভারসাম্য, মুদ্রানীতি ও বৈদেশিক লেনদেন ব্যবস্থাপনায় আরও বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত না রাখলে ভবিষ্যৎ কিস্তি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে। তবে আপাতত এই ঋণ দেশের অর্থনীতিকে কিছুটা হলেও শ্বাস নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।