নওগাঁ, উত্তরের জেলা হিসেবে এখন মাঘ মাসে তীব্র শীতের সম্মুখীন। ২৬ জানুয়ারি রোববার সকাল ৯টায় নওগাঁয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে, যা এই মৌসুমে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগের দিন, ২৫ জানুয়ারি, তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যদিও সকাল থেকেই কুয়াশার দাপট নেই, তবে হিমেল বাতাসের কারণে শীতের তীব্রতা অব্যাহত রয়েছে।
শীতের কারণে জনজীবনে বেশ প্রভাব পড়ছে, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ এবং কৃষকদের জন্য এটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষিজীবী মানুষরা তাদের জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন সকালে জমিতে কাজ করতে বের হন, কিন্তু তীব্র শীতে কাজ করা অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। শীতের কারণে জমিতে কাজের গতি কমে গেছে, বিশেষ করে বোরো ধান রোপণের মৌসুম চলমান থাকায় এর প্রভাব পড়ছে কৃষি কাজে। তীব্র শীতে জমিতে কাজ করার জন্য যথেষ্ট সময় নেই, যা কৃষকদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নওগাঁর বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকার রিকশাচালক জব্বার জানান, কুয়াশা কম হলেও সকাল থেকে বাতাস বেশ প্রবাহিত হচ্ছে, যার ফলে শরীরের ভিতরে শীত প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে সকালে রিকশা চালানো বেশ কষ্টকর হয়ে পড়ে। বিকেলের পর থেকে শীত আরও বাড়তে শুরু করে, ফলে সন্ধ্যার পর রিকশা চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। শীতের এই তীব্রতার কারণে তারা দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্মে বেশ অসুবিধায় পড়ছেন।
শ্রীগাছী ইউনিয়নের কৃষক ফিরোজ হোসেন জানান, গত দুই দিন ধরে সূর্য উঠলেও ঠাণ্ডা বাড়ছে। সকালে জমিতে কাজ শুরু করা সম্ভব হয় না, কারণ পানিতে পা দিলে তা বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে যায়। তীব্র শীতে ধান রোপণের কাজ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। কৃষকদের জন্য শীতের এই সময়ে কাজের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে, এবং অনেক সময়ে কাজ করতে গিয়ে তাদের স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব পড়ছে।
নওগাঁর বদলগাছী কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, কুয়াশার পরিমাণ কম থাকলেও তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা বিশেষভাবে খেটে খাওয়া মানুষের জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করছে। তার মতে, তাপমাত্রা আরও কমে যেতে পারে, ফলে কৃষি কাজে আরও সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
অপরদিকে, জনজীবনে অন্যান্য অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তায় চলাচলকারী মানুষের জন্য শীতের কারণে অনেক সময় প্রাত্যহিক কাজকর্মে অসুবিধা হচ্ছে। পরিবহন ব্যবস্থা প্রভাবিত হচ্ছে, বিশেষ করে দিনের বেলায় কুয়াশা থাকলে রাস্তায় চলাচলে সমস্যা দেখা দেয়, যা ট্রাফিক জ্যাম এবং দুর্ঘটনাকেও বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও, শীতের কারণে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ শিথিল হয়ে পড়ে এবং মানুষদের জন্য শীতের মধ্যেই বাইরের কাজ করতে শারীরিকভাবে আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
নওগাঁবাসী জানান, শীতের তীব্রতার কারণে স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়ছে। তীব্র শীতে সর্দি-কাশি, জ্বর এবং শীতজনিত অন্যান্য রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে, যা স্থানীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করছে। হাসপাতালগুলোতে ঠাণ্ডা জনিত রোগীদের সংখ্যা বাড়ছে, এবং সরকারি হাসপাতালগুলিতে শীতকালীন সেবা আরও বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে শীতজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবিলায় বিশেষ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। শীতবস্ত্র বিতরণ এবং স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা ও সচেতনতার মাধ্যমে শীতজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা এড়ানো সম্ভব।
নওগাঁ জেলা প্রশাসন এবং আবহাওয়া দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শীতের তীব্রতা কিছুদিন আরও বাড়তে পারে, বিশেষ করে রাতের তাপমাত্রা আরও কমে যেতে পারে। তবে দিনকালীন সময়ে কুয়াশার প্রভাব কমে আসবে। শীতের তীব্রতার কারণে স্থানীয় প্রশাসন স্থানীয় জনগণের জন্য শীতকালীন সহায়তা অব্যাহত রাখবে এবং তাদের সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
নওগাঁবাসী শীতের এই সময়ে নিরাপদে থাকলে তাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি কম হবে এবং তারা এই কঠিন সময় কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। তবে সবাইকে পরস্পরের সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে এই কঠিন সময়ের মোকাবিলা করতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।