সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যার ২০ বছর পার হলেও বিচার এখনও আলোর মুখ দেখেনি। ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের বৈদ্যেরবাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগের জনসভা শেষে ফেরার পথে গ্রেনেড হামলায় কিবরিয়া ও তার ভাতিজাসহ পাঁচজন নিহত হন এবং আহত হন ৪৩ জন। এ ঘটনায় দুটি মামলা হলেও তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছেন তার পরিবার। নিহতের ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ তিনজন সদস্য আবু জাহির, মজিদ খান, এবং ডা. মুশফিক চৌধুরী হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। তিনি আরও দাবি করেন, অর্থমন্ত্রীকে হত্যার জন্য ফান্ডিং করেছিলেন সালমান এফ রহমান, যার সঙ্গে কিবরিয়ার শত্রুতা ছিল ব্যাংক ও শেয়ার বাজারের দুর্নীতির বিষয়ে।
রেজা কিবরিয়া বলেন, শেখ হাসিনার খুব কাছের এই ব্যক্তিদের জড়িত থাকার কারণে আওয়ামী লীগ আমলে সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি। ২০ বছর ধরে বিচার প্রক্রিয়া ঝুলে আছে, অথচ প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা হয়েছে। তিনি জানান, বিচার হবে, তবে এ সরকারের আমলে নয়। ভবিষ্যতে সুষ্ঠু বিচার হলে তারা তাতে সন্তুষ্ট হবেন। পরিবারের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকার অসামাপ্ত তদন্তের ভিত্তিতে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল, যা প্রকৃত অপরাধীদের বাঁচানোর উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল।
সূত্র মতে, ২০১৫ সালে বিএনপি নেতাদের জড়িয়ে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়। কিন্তু সেই চার্জশিট সঠিক নয় বলে অভিযোগ করেছেন নিহত কিবরিয়ার পরিবার। দীর্ঘ আট বছরেও বিচার কাজ শেষ হয়নি। এদিকে, স্থানীয়রা মনে করেন, সঠিক তদন্ত ছাড়া বিচার অসম্ভব। এ অবস্থায় নতুন তদন্তের দাবি জোরালো হচ্ছে।
গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মামলাগুলো প্রথম থেকেই জটিলতায় পড়ে। ২০১৫ সালের প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিচার কার্যক্রম শুরু হলেও পরিবারের সদস্যরা এটিকে সুষ্ঠু বলে মানতে নারাজ। তারা দাবি করেছেন, বিচার প্রক্রিয়া বারবার বিলম্বিত হয়েছে এবং এতে ন্যায়বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
২০০৫ সালের ওই দিনে কিবরিয়ার শরীরে প্রায় ৪০০ স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়েছিল। একটি ভাঙা অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আনার পথে তার মৃত্যু হয়। পরিবার দাবি করে, ওই সময় চিকিৎসা ও প্রাথমিক তদন্তের অব্যবস্থাপনা ঘটনার গুরুত্বকে কমিয়ে দিয়েছে। এতে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে দফায় দফায় তদন্ত হলেও প্রকৃত সত্য উন্মোচিত হয়নি। এতে পরিবার ও স্থানীয়রা হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাদের বিশ্বাস, সঠিক তদন্ত হলে প্রকৃত অপরাধীরা ধরা পড়বে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে বর্তমান সরকারের আমলে সুষ্ঠু বিচারের আশা করছেন না নিহতের পরিবারের সদস্যরা।
২০ বছর পার হলেও বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা ও অসামাপ্ত তদন্ত কেবল ন্যায়বিচারের পথকে কঠিন করেছে। পরিবারের দাবি, সঠিক বিচার প্রতিষ্ঠা না হলে এই হত্যাকাণ্ডের ইতিহাসে প্রকৃত দোষীরা আড়ালে থেকে যাবে। তারা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এই মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।