হাকিমপুরে প্রমীলা ফুটবল টুর্নামেন্ট বন্ধের দাবিতে সংঘর্ষ, আহত ১০

নিজস্ব প্রতিবেদক
গোলাম রব্বানী, নিজস্ব প্রতিনিধি (দিনাজপুর)
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২৮শে জানুয়ারী ২০২৫ ০৮:১৯ অপরাহ্ন
হাকিমপুরে প্রমীলা ফুটবল টুর্নামেন্ট বন্ধের দাবিতে সংঘর্ষ, আহত ১০

দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার আলিহাট ইউনিয়নের বাওনা অস্থায়ী মাঠে অনুষ্ঠিত প্রমীলা প্রীতি ফুটবল টুর্নামেন্ট বন্ধের দাবিতে তৌহিদী জনতার সাথে আয়োজক কমিটির সদস্যদের সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বিকাল ৩ টায় এ সংঘর্ষ ঘটে। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও, পুলিশি ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।


জানা যায়, বাওনা ছাত্র কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে বিজয় দিবস উপলক্ষে অস্থায়ী মাঠে ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। ওই টুর্নামেন্টে প্রমীলা ফুটবল প্রতিযোগিতাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু স্থানীয় তৌহিদী জনতা খেলার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন জানায় এবং খেলা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। 


বিক্ষোভ মিছিলের সময় হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায়, হাকিমপুর ঘোড়াঘাট সার্কেলের এএসপি আ ন ম নিয়ামত উল্লাহ এবং পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। স্থানীয় যুবকরা লাঠিসোটা নিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়, ফলে দুই পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়।


ঘটনার পর এক বিক্ষোভকারী অভিযোগ করে বলেন, "আমরা প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম এবং তারা আশ্বাস দিয়েছিল যে খেলা বন্ধ করা হবে। কিন্তু আজ আবার খেলা চালু করতে তারা মাইকিং করে আমাদের মিথ্যা বলেছে যে ডিসি মহোদয় অনুমতি দিয়েছেন।" তিনি আরও জানান, "আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করতে গেলে আয়োজক কমিটির সদস্যরা আমাদের ওপর হামলা চালায়, পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।"


হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায় জানান, "আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই পক্ষের লোকজনকে শান্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু কিছু লোক অতর্কিত হামলা চালায় এবং এতে ৪-৫ জন আহত হয়। আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তার সাথে কথা বলে আহতদের বিনা পয়সায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।" তিনি আরও বলেন, "এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও, হাকিমপুর উপজেলায় কোনো প্রমীলা ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হবে না।"


এদিকে, হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাট থানার সার্কেল এএসপি আ ন ম নিয়ামত উল্লাহ বলেন, "খেলার জন্য কোন অনুমতি নেওয়া হয়নি। তবে আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছি এবং মাঠের চতুর্পাশে কাপড় সরানোর ব্যবস্থা করি। কিছুক্ষণ পর আয়োজক কমিটির সদস্যরা এবং তৌহিদী জনতার মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। পুলিশ পর্যাপ্ত ছিল না, তাই আমরা সঠিকভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারিনি। তবে আমরা যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেব।"


সংঘর্ষের পর আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে। এই সংঘর্ষের পর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে, তবে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। 


এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে হতাশা দেখা গেছে, বিশেষ করে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসন যদি আরও সতর্কভাবে কাজ করত, তাহলে এ ধরনের সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হত। আগামী দিনে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, সেজন্য সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। 


এ ঘটনা নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিকদের মধ্যে আলোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেই বলছেন, প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও শক্তিশালীভাবে ভূমিকা রাখতে হবে, যাতে এ ধরনের সহিংসতার পুনরাবৃত্তি না হয়।