বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন: নতুন প্রজন্মের পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক
মোঃ শওকত হায়দার (জিকো) সম্পাদক , ইনিউজ৭১
প্রকাশিত: রবিবার ১৫ই ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:০১ অপরাহ্ন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন: নতুন প্রজন্মের পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা

বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করা এই সংগঠনটি শুরু থেকেই সরকারের অসামঞ্জস্যতা ও ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্বদান থেকে শুরু করে নতুন সরকারের পরও তাদের সক্রিয়তা, এই সংগঠনটির লক্ষ্য এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন প্রশ্ন ও প্রত্যাশার জন্ম দিয়েছে।


অরাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তি তৈরি করেছে। তাদের ৬৫ সদস্যের সমন্বয়ক টিম থেকে ১৫৮ সদস্যে বৃদ্ধি এবং পরবর্তী সময়ে ৪ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন এটাই প্রমাণ করে যে, তারা সুসংগঠিত এবং দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্রম পরিচালনায় সচেষ্ট।


ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের কার্যক্রমকে জেলা, মহানগর, এবং জাতীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে। ইতিমধ্যে ১৮ সদস্যের নির্বাহী কমিটি এবং দপ্তর ও মিডিয়া সেল গঠন করেছে সংগঠনটি। ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন জেলায় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করার মাধ্যমে তাদের সাংগঠনিক ভিত্তি আরো দৃঢ় হয়েছে।


সংগঠনের মূল কার্যালয় রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারে স্থাপন এবং নিয়মিত জেলা সফর, আলোচনা সভা ও জাতীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ তাদের প্রতিশ্রুতি এবং কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা তুলে ধরে। সংগঠনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই সব জেলায় কমিটি গঠন এবং ভবিষ্যতে গঠনতন্ত্র প্রণয়ন তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য।


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দ্রুত বিকাশ ও প্রভাব রাজনীতির মাঠে নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, এটি অদূর ভবিষ্যতে একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক এবং একীভূত কার্যক্রম অনেক বিশ্লেষকের মতে, ভবিষ্যতে একটি শক্তিশালী ছাত্র সংগঠন কিংবা রাজনৈতিক দলের ভিত্তি হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।


তবে, সংগঠনটির আসল চ্যালেঞ্জ থাকবে অরাজনৈতিক অবস্থান ধরে রাখা এবং বস্তুনিষ্ঠ কার্যক্রম পরিচালনা করা। রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের আকাঙ্ক্ষা যেন তাদের মূল লক্ষ্যকে বিভ্রান্ত না করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই অবস্থান ও কার্যক্রম আমাদের একটি নতুন ধরনের ছাত্র রাজনীতির সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখাচ্ছে, যেখানে ব্যক্তি ও দলের ঊর্ধ্বে থেকে জাতীয় কল্যাণের উদ্দেশ্যেই কাজ করা হবে।


বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ছাত্র রাজনীতি সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সেই ধারার একটি আধুনিক সংস্করণ হতে পারে। তবে এটি কতটা সফল হবে তা নির্ভর করবে তাদের লক্ষ্য এবং কার্যক্রমের ধারাবাহিকতার ওপর।


এখন সময়ই বলে দেবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি অরাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে টিকে থাকবে, নাকি তা একটি রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরিত হবে। তবে যে কোনো ক্ষেত্রেই, তাদের মিশন এবং মূল্যবোধের প্রতি একনিষ্ঠতা ধরে রাখাই হবে এই সংগঠনের দীর্ঘমেয়াদী সফলতার মূল চাবিকাঠি।