আচ্ছা লেখার শিরোনামটাই যেন ব্যাকরণ মানছে না! আর মানবেই বা কেন? শ্রীলংকার সাথে ব্যর্থ লেখার প্রয়োজন হয় না এখন। কারণ শ্রীলংকা যেন ব্যর্থ শব্দেরই সমার্থক। আচ্ছা বর্তমানে অনেকেই ব্যক্তিস্বার্থ বা অন্য কোন কারনে বাংলাদেশকে শ্রীলংকার সাথে তুলনা করি, এই তুলনা কি যৌক্তিক?
বাংলাদেশের ঋণের পরিমান ১৩১.১৪ বিলিয়ন।
যা ২০২০ সালের জিডিপির মাত্র ৩৪.৭%;।
এটা আবার দক্ষিন এশিয়ার মাঝে সর্বনিম্ন।
শ্রীলংকায় সেটি ছিল তাঁদের জিডিপির ১১২.২% ।
শ্রীলংকার আজকের যে অর্থনৈতিক দুর্গতি তার মূলে ক্ষমতাসীনদের লুটপাট, রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থতা শুধু দায়ী নয়; এটি ভোটের রাজনীতির জন্য দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রকর্তৃক সাম্প্রদায়িকতার চাষাবাদের ফসল, যেটি এখন দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ব্যাপকভাবে চাষাবাদ করছে ভারত।
শ্রীলংকার সদ্য পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকশা এবং তার ছোট ভাই প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকশা প্রায় দুই দশক ধরে শ্রীলংকা শাসন করছেন। মাহিন্দা ছিলেন জনগণের চোখে হিরো কারণ তামিল বিদ্রোহীদের নিঃশেষ করে শ্রীলঙ্কাকে গোলযোগ মুক্ত করেছিলেন তিনি। কিন্তু তিনি এখন ভিলেন।
মাহিন্দ্রা এবং গোটাবায়া- এই দুই ভাই উগ্র সিংহলি জাতীয়তাবাদকে চাষ করেছেন কারণ ৭০ শতাংশ ভোট বৌদ্ধদের। ডিভাইড এন্ড রুল নীতিতে বৌদ্ধ ভোট পেলে তাদের জয় নিশ্চিত হয়। তারা সংখ্যালঘুদের দমনের নীতি নিয়েছিলেন, বিশেষ করে মুসলমানেরা সেখানে নিষ্পেষিত। যার ফলশ্রুতিতে ২০১৯ সালে দেশজুড়ে আত্মঘাতী বোমা হামলাও হয়েছে। সংখ্যালঘু তামিল হিন্দুরাও তাদের শাসনে বৈষম্যের শিকার।
পাকশে ভ্রাতৃদ্বয় ভোটের রাজনীতিতে উগ্র জাতীয়তাবাদের চাষ করতে গিয়ে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেকে এনেছেন পর্যটন নির্ভর দেশটিতে। দেশটির নতুন কৃষিনীতি তার খাদ্য উৎপাদনকে হুমকিতে ফেলেছে। চীন থেকে কড়া শর্তে ঋণ নিয়েছে। আইএমএফ ঋণ দেয় নি।
সংখ্যালঘু নির্যাতন করে কোনো দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যেতে পারে না, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। ভারত ও পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সূচক নিচের দিকে নামছে।
ভারত, পাকিস্তান ও ভারতের মতো 'ডিভাইড এন্ড রুল' পলিসি বাংলাদেশও আছে তবে সেটি তাদের মতো সাম্প্রদায়িকতা ভিত্তিক নয়। এটি চলছে চেতনা এবং নন চেতনাভিত্তিক। ভারতীয় দালাল এবং পাকিস্তানি দালাল ভিত্তিক। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও জাতি হিসেবে আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি, ভোটের রাজনীতির এই খেলার কারণে।
শ্রীলংকার মতো বাংলাদেশের অর্থনীতি দুর্বল হবে না। কারণ এই দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে সাম্প্রদায়িকতার চাষ করা হচ্ছে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্থনৈতিক বিষয়ে দুরদর্শিতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ।
বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের দুটি খাত-- গার্মেন্টস রপ্তানি এবং প্রবাসী রেমিটেন্স দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও আইটি খাতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষনীয়। রপ্তানিযোগ্য পন্য বৈচিত্র্যময় হয়েছে।
সবচেয়ে বড়কথা অবকাঠামোখাতে অবিশ্বাস্য গতিতে উন্নয়নের ফলে পৃথিবীর সেরা কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।
শ্রীলঙ্কাকে দেখে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন আছে কিন্তু আতঙ্কিত হওয়ার যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই।
এগিয়ে যাক বাংলাদেশ, এগিয়ে যাবে আমাদের এই মাতৃভূমি।
জয় বাংলা।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।