ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে ইরি-বোরো ধান রোপণের মহোৎসব চলছে। কৃষকরা তাদের স্বপ্নের ফসল ঘরে তোলার আশায় দিন-রাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। সরাইলের মাঠ এখন ধান রোপণে কৃষকদের পদচারণায় মুখরিত। আমন ধান কাটা ও মাড়াই শেষে কৃষকরা ইরি-বোরো চাষে নতুন উদ্যমে নেমেছেন। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা কাঁদা-পানিতে নেমে ধানের চারা রোপণের কাজ করছেন। চলতি রবিশস্য মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বীজতলার কোনো ক্ষতি হয়নি। ফলে এবার সরাইলের প্রতিটি মাঠ জুড়ে ইরি-বোরো ধান রোপণের চিত্র দেখা যাচ্ছে।
বোরো মৌসুমে সেচ কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে সরাইল বিদ্যুৎ বিভাগ সক্রিয় রয়েছে। বিদ্যুৎ অফিস জানায়, উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে প্রায় ছয়শত বিদ্যুৎচালিত মোটর ও গভীর নলকূপ রয়েছে, যা শুধু বোরো চাষে সেচের জন্য ব্যবহার করা হয়। কৃষকরা জানিয়েছেন, সেচ সুবিধা সহজলভ্য হওয়ায় এবার চারা রোপণ আরও সহজ হয়েছে। তারা আশা করছেন, এবার ধানের বাম্পার ফলন হবে। সরাইল উপজেলা বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম আহমেদ জানিয়েছেন, সেচ পাম্পগুলো নিয়মিত চালানোর জন্য কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সরাইল উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, এবারে উপজেলায় প্রায় ১৫ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই জমি থেকে ৬২ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. একরাম হোসেন বলেছেন, কৃষকরা যদি কৃষি অফিসের দেওয়া পরামর্শ মেনে চলেন এবং কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসে, তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব। তিনি আরও জানান, কৃষকদের যে কোনো সমস্যায় দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কৃষকদের মতে, এবারের শীত মৌসুমে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় চাষের পরিবেশ অনুকূলে রয়েছে। অনেক কৃষক জানিয়েছেন, ধানের চারা সহজলভ্য হওয়ায় চাষের কাজ দ্রুত শেষ হচ্ছে। তারা আশাবাদী যে এ বছর ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে, যা তাদের কষ্টের ফল মেটাবে। সরাইলের বিভিন্ন মাঠে ধানের চারা রোপণের উৎসবমুখর পরিবেশ কৃষকের স্বপ্ন ও আশার প্রতিফলন ঘটাচ্ছে।
সরাইলের কৃষকদের পাশাপাশি স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগও ধান চাষে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। সেচ কার্যক্রমে যাতে কোনো বিঘ্ন না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ বিভাগ সজাগ রয়েছে। কৃষকদের জমিতে পানির সংকট এড়াতে সঠিক সময়ে সেচের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের তৎপরতা এবং কৃষকদের পরিশ্রমে এবার বোরো চাষে সরাইল উপজেলার সাফল্য আশা করা যাচ্ছে।
কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সার্বক্ষণিক নজরদারি ও কৃষকদের সহায়তার মাধ্যমে বোরো মৌসুমে সম্ভাব্য সব সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগের তৎপরতা এবং কৃষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে সরাইল উপজেলায় এবার ইরি-বোরো ধানের ফলন ভালো হবে বলে সবাই আশাবাদী।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।