পাকিস্তানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে প্রাণ গেল ৩০ জনের

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার ২৬শে জানুয়ারী ২০২৫ ১১:১৭ পূর্বাহ্ন
পাকিস্তানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে প্রাণ গেল ৩০ জনের

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী অন্তত ৩০ জন সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে। শনিবার পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। তাদের মতে, লাক্কি মারওয়াত জেলায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত এই অভিযানে সেনা সদস্যরা সক্রিয়ভাবে সন্ত্রাসীদের অবস্থানে আঘাত হানে, যেখানে ১৮ জন সন্ত্রাসী নিহত এবং ছয়জন আহত হয়েছে। এ অভিযানে সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।  


এর পাশাপাশি কারাক জেলায় পরিচালিত আরেক অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনী আটজন সন্ত্রাসীকে নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম হয়। এছাড়া খাইবার জেলার বাগ এলাকায় আরও একটি অভিযান চালিয়ে চারজন সন্ত্রাসীকে হত্যা করা হয়েছে। আইএসপিআর-এর বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, প্রতিটি অভিযানের লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসীদের মূল অবস্থান ধ্বংস করা এবং স্থানীয় নিরাপত্তা পুনঃস্থাপন করা।  


এই সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের প্রশংসা করেছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি এবং প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। তারা বলেন, দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় এই ধরনের কার্যক্রম অপরিহার্য। সম্প্রতি পাকিস্তানে সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় এই ধরনের অভিযান শুরু করার কথা জানিয়েছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।  


আইএসপিআরের মতে, দেশব্যাপী এ ধরনের অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসীদের নেটওয়ার্ক দুর্বল করে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব হামলায় বেসামরিক লোকজন এবং নিরাপত্তা কর্মীদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।  


বিশ্লেষকদের মতে, এই অভিযানগুলো পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে, সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে আরও শক্তিশালী গোয়েন্দা তথ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজন রয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেছেন, সন্ত্রাসীদের মূলোৎপাটনে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কোনো ধরনের আপস করবে না।  


লাক্কি মারওয়াত, কারাক, এবং খাইবারের মতো এলাকাগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসীদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব এলাকায় অভিযান চালানোর মাধ্যমে নিরাপত্তা বাহিনী স্থানীয় জনগণের মধ্যে একটি নিরাপত্তার অনুভূতি ফিরিয়ে আনতে চাইছে। এসব অঞ্চলে সন্ত্রাসীদের অস্ত্র সরবরাহ লাইন এবং আর্থিক সহায়তা নেটওয়ার্ক ধ্বংস করার লক্ষ্যে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।  


পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব অভিযানের ফলে সন্ত্রাসীরা তাদের অবস্থান পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে এবং তাদের সংগঠিত কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে, তারা সতর্ক করেছেন যে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জনে আরও সময় এবং প্রচেষ্টা প্রয়োজন।  


পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে এই সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানগুলো প্রশংসিত হচ্ছে। অনেকে মনে করেন, এই অভিযানগুলো দেশকে একটি সন্ত্রাসমুক্ত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে। নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন যে, দেশব্যাপী এই অভিযান চালিয়ে তারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একটি কঠোর বার্তা পৌঁছে দিতে পেরেছে।