রমজানের প্রস্তুতির বরকতময় মাস শাবান

নিজস্ব প্রতিবেদক
ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার ৪ঠা এপ্রিল ২০২০ ০৯:২৪ পূর্বাহ্ন
রমজানের প্রস্তুতির বরকতময় মাস শাবান

চলছে বরকতময় মাস শাবান। করোনার প্রকোপে নীরবে নিভৃতে বিদায় নিয়েছে বরকতময় মাস রজব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের আগের এ দুই মাস (রজব ও শাবানে) ইবাদত-বন্দেগি, রোজা পালন ও দোয়ার মাধ্যমে রমজানের প্রস্তুতি নিতেন।ইতিমধ্যে শাবান মাসেরও ৮ দিন অতিবাহিত হয়েছে। অথচ মানুষ রমজানের প্রস্তুতির এ মাসটিকে বেমালুম ভুলে গেছে। রজব ও শাবান মাসে বিশ্বনবি বেশি বেশি রোজা রাখতেন।

রজানের প্রস্তুতিস্বরূপ এ দুই মাস ইবাদত-বন্দেগিতে ব্যস্ত থাকতেন বিশ্বনবি। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা শাবান মাসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমল সম্পর্কে বলেছেন-
আমি তাঁকে (রাসুলুল্লাহ) শাবান মাসের মতো এতো বেশি রোজা রাখতে অন্য কোনো মাসে দেখিনি।'রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সারা বছরই নফল রোজা রাখতেন। সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন। আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখতেন। কিন্তু রজব মাসের পর শাবান মাসেও বিশ্বনবি একাধারে রোজা রাখতেন।

শাবান মাসে ধারাবাহিক রোজা রাখতে দেখে সাহাবায়ে কেরাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন- হে আল্লাহর রাসুল! আপনি শাবান মাসে যেভাবে রোজা রাখেন, অন্য মাসগুলোতে তো এভাবে রোজা রাখতেন না।জবাবে রাসুলুল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, এটা রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী মাস। এ মাস সম্পর্কে মানুষ উদাসিন থাকে। এটা এমন এক মাস, যে মাসে আল্লাহর কাছে বান্দার আমল উপস্থাপন করা হয়। আমি এটা ভালোবাসি যে, রোজাদার অবস্থায় আমার আমল উপস্থাপন করা হোক।'

এ মাসজুড়ে বিশ্বনবি একটি দোয়া বেশি বেশি পড়তেন। আর তাহলো-
اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَانَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি শাবানা ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।'

অর্থ : হে আল্লাহ! শাবান মাসে আমাদের বরকত দান করুন আর আমাদের রমজানে পৌঁছে দিন।'

প্রাণঘাতী মহামারি করোনার প্রভাবে বরকতময় শাবান মাসকে যেন ভুলে না যাই। বরং এ মাসে বেশি বেশি ইবাদত করে রমজানের প্রস্তুতির পাশাপাশি করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি। এ মাসে করোনা থেকে বাঁচতে বেশি বেশি এ দোয়াগুলোর আমল করি-

করোনাভাইরাস থেকে বেঁচে থাকতে হাদিসে ঘোষিত এ দোয়াগুলোর আমলও করা যেতে পারে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তিনবার বলবে-
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিসসামায়ি, ওয়া হুয়াসসাম উল আলিম।’

সকাল হওয়া পর্যন্ত ওই ব্যক্তির উপর আকস্মিক কোনো বিপদ আসবে না। আর যে ব্যক্তি সকালে তিনবার এ দোয়া পড়বে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার ওপর কোনো বিপদ আসবে না।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ)
অর্থ : ‘আল্লাহর নামে, যার নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী।’

>> اَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَ الْجُنُوْنِ وَ الْجُذَامِ وَمِنْ سَىِّءِ الْاَسْقَامِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাচি ওয়াল জুনুনি ওয়াল ঝুজামি ওয়া মিন সায়্যিয়িল আসক্বাম।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)

>> اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ وَ الْاَدْوَاءِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাক্বি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়ায়ি, ওয়াল আদওয়ায়ি।’ (তিরমিজি)

প্রাণঘাতী মহামারি করোনাভাইরাসের এ বিপদ মুহূর্তে বেশি বেশি এ দোয়টি পড়া-

لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِالله الْعَلِىِّ الْعَظِيْم

উচ্চারণ : ‘লা হাউলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম।’

অর্থ : ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো শক্তি নেই, কোনো ভরসা নেই, যিনি মহান ও সর্বশক্তিমান।’

‘লা হাওলা’ পড়ার মাধ্যমে কত বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং আল্লাহর প্রশান্তি, দয়া ও মদদ পাওয়া যায় তা যদি মানুষ জানতো তবে এ দোয়া এমনভাবে পড়তো যে, মুহূর্তের জন্য বিরাম নিতো না। বরং চলতে ফিরতে, উঠতে বসতে সব সময় ‘লা হাওলা ওয়া লা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম’ পড়তো।

মহামারি করোনার কারণে অধিকাংশ মানুষ বাসা-বাড়িতে লকডাউন অবস্থায় আইসোলেশন, হোমকোয়ারেন্টাইনে অবস্থান করছেন। কোয়ারেন্টাইনের অবসর সময়ে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগি করে শাবান মাসের হক আদায় করার শ্রেষ্ঠ সময় এখনই। সময়ের সদ্ব্যবহার করে ইবাদত-বন্দেগি-রোজা পালন করা জরুরি।

উল্লেখ্য, ১৪৪১ হিজরি সনের রমজান পূর্ব অর্ধ শাবান বা লাইলাতুল বারাআত ৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। এ রাতে মুসলিম উম্মাহ ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করবে। মুমিন মুসলমান করোনাসহ যাবতীয় মহামারি থেকে বেঁচে থাকার জন্য অর্ধ শাবান খ্যাত লাইলাতুল বারাআতে আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শাবান মাসজুড়ে রমজানের প্রস্তুতি নিতে এবং করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন। বেশি বেশি রোজা রাখার তাওফিক দান করুন। উল্লেখিত দোয়াটির মাধ্যমে এ মাসের বরকত ও রমজানের রহমত বরকত ও মাগফেরাত লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ইনিউজ ৭১/ জি.হা