প্রকাশ: ৮ মে ২০২৫, ১১:২০
ইসলাম ধর্মে দোয়া একটি অসাধারণ শক্তিশালী ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়। আল্লাহর প্রতি আমাদের আশ্রয়, নির্ভরতা ও ভালোবাসা প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হলো দোয়া। কুরআন ও হাদীসের অসংখ্য স্থানে দোয়ার গুরুত্ব, ফলপ্রসূতা এবং তা কবুল হওয়ার পদ্ধতি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। দোয়া শুধু ইবাদত নয়, এটি বান্দা ও আল্লাহর মধ্যে সরাসরি এক হৃদ্যতা ও সংযোগের পথ।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “দোয়া ইবাদতের মূল” (তিরমিজি)। অর্থাৎ ইবাদতের প্রাণশক্তিই হলো দোয়া। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সুখ-দুঃখ, চাওয়া-পাওয়ার সবকিছুই আমরা আল্লাহর কাছে চাইতে পারি এবং আল্লাহ দয়াশীল, তিনি বান্দার দোয়া শুনে সাড়া দেন। এমনকি কখনো তাৎক্ষণিক ফল না মিললেও, আল্লাহ তা বান্দার জন্য উত্তম সময়ে ওভাবে কবুল করেন, যা বান্দার জন্য সর্বোত্তম হয়।
দোয়া করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো ভাষা বা সময় বাধ্যতামূলক নয়। তবে কিছু সময়কে মর্যাদাপূর্ণ বলা হয়েছে যেমন, তাহাজ্জুদের সময়, রমজানের ইফতারের মুহূর্ত, জুমার দিনের শেষ ঘণ্টা ইত্যাদি। এছাড়া আল্লাহর ৯৯টি গুণবাচক নাম দ্বারা দোয়া শুরু করলে তা অধিক কবুল হয় বলে হাদীসে উল্লেখ আছে।
তবে দোয়া করার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিষ্টাচার পালন করা উচিত। যেমন, আল্লাহর প্রশংসা ও রাসূল (সা.)-এর প্রতি দরূদ পাঠের মাধ্যমে দোয়ার সূচনা করা, দোয়া করার সময় অন্তর থেকে মনোযোগ ও বিশ্বাস রাখা, বারবার অনুরোধ করা এবং নিজের গুনাহের জন্য ক্ষমা চাওয়া। আল্লাহর কাছে আন্তরিকতা ও বিনম্রতা দোয়ার কবুলের প্রধান চাবিকাঠি।
দোয়ার মাধ্যমে একজন মুমিন তার দুর্বলতা ও অক্ষমতার স্বীকৃতি দিয়ে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ নির্ভরতা প্রকাশ করে। এভাবেই আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটে এবং ঈমান আরও মজবুত হয়। কেউ যখন বিপদে পড়ে, তখন দোয়া তাকে মানসিকভাবে শান্ত করে এবং ভরসা জোগায়। তাই মুসলমান মাত্রই দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট নিকটবর্তী হওয়ার চেষ্টা করা উচিত।
কখনো কখনো মানুষ দোয়া করে মনে করে যে তার দোয়া কবুল হয়নি। অথচ হাদীস বলে, দোয়া কবুল হয় তিনভাবে—কখনো তৎক্ষণাৎ, কখনো দুনিয়ার বিপদ থেকে রক্ষা করে আর কখনো পরকালে উত্তম পুরস্কারে রূপ নেয়। কাজেই ধৈর্য ও ভরসার সঙ্গে দোয়া করতে হবে।
আমাদের সমাজে অনেকেই কেবল বিপদের সময় দোয়া করেন। অথচ প্রতিদিনের জীবনে সুখের মুহূর্তেও আল্লাহর শোকরিয়া আদায় ও দোয়া করা উচিত। কেননা আল্লাহ বলেন, “আমার স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ করব” (সূরা বাকারা, আয়াত ১৫২)।
তাই আসুন, প্রতিদিন আমরা অন্তর থেকে আল্লাহর কাছে দোয়া করি। আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই দোয়া ও আল্লাহর প্রতি আস্থা হোক আমাদের সর্বোচ্চ শক্তি।