যেসব কাজ আল্লাহ ঘোষিত ইবাদতের অন্তরায়
মানবজাতিকে সৃষ্টির একমাত্র উদ্দেশ্য হলো তার ইবাদত করা। এ কথা ঘোষণা করেছেন আল্লাহ তাআলা। কুরআনে এসেছে-
‘আমি জিন ও মানবজাতিকে কেবল আমারই ইবাদত ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি। (সুরা যারিয়াত : আয়াত ৫৬)
এ আয়াতের আলোকে বলা যায়, মানুষের প্রতিটি কাজই হবে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। অন্যায় না ছেড়ে ভালো কাজ করে যাওয়া ইবাদত নয়।
আল্লাহ তাআলা যেসব বিষয় থেকে মানুষকে বিরত থাকতে বলেছেন, সেগুলো থেকে বিরত না থেকে শুধু নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, তাসবিহ-তাহলিল ইত্যাদি ভালো কাজে নিয়োজিত থাকলে আলোচ্য আয়াতের হুকুমও বাস্তবায়িত হবে না।
কেননা কোনো ব্যক্তির মিথ্যা বলা, সুদ-ঘুষের সঙ্গে জড়িত থাকা, চোগলখুরি করা, অশ্লীলতা ও বেহায়পনায় জড়িয়ে পড়া, হিংসা-বিদ্বেষ ও মুনাফেকি করা এবং মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে যে কোনো ভালো কাজ ইবাদতে পরিগণিত হওয়ার অন্তরায়।
আয়াতের হুকুম অনুযায়ী নামাজ, রোজা, হজ পালনকারী কিংবা জাকাত দেয়া ব্যক্তি কখনো উল্লেখিত অন্যায়ের সঙ্গে যেমন জড়িয়ে পড়বে না। তেমনি যদি তারা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে তবে তাদের এসব ধর্মীয় ও নৈতিক কাজও কুরআনে বিধান মতে ইবাদতে পরিগণিত হবে না।
কুরআন হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী আমরা জানি, ইসলামের প্রধান ইবাদতগুলো মানুষকে অনেক উপকারিতা ও ফায়েদা দেয়। আর তাহলো-
>> নামাজ : মানুষকে যাবতীয় অশ্লীলতা ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে।
>> জাকাত : মানুষের সম্পদকে পবিত্র করে, সম্পদে বরকত দেয়।
>> হজ : মানুষকে স্বচ্ছলতা দান করে। অভাব দূর করে দেয় এবং
>> রোজা মানুষকে আত্মিক ও মানসিকভাবে পূতঃপবিত্র করে তোলে।
এখন মানুষ যদি অন্যায় অপরাধের সঙ্গেও নিজেকে জড়িয়ে রাখে আবার নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত আদায় করে; তাহলে বুঝতে হবে- মানবজাতির সৃষ্টির উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়নি।
আবার এমনিভাবে ইবাদত-বন্দেগি করা আর পাপাচারে জড়িয়ে থাকা কুরআনে বর্ণিত বিধানও নয় বরং তা ইবাদতের ভুল ধারণা মাত্র।
সুতরাং মানুষের উচিত ইবাদতের ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসা। অন্যায় থেকে বিরত থাকার নিয়তেই নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতের হুকুম নিজেদের জীবনে যথাযথ বাস্তবায়ন করা।
মনে রাখা জরুরি
নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের বিধান পালনের পাশাপাশি অশ্লীল ও অন্যায়, সুদ-ঘুষসহ যাবতীয় নিষিদ্ধ কাজে জড়িয়ে পড়া ইবাদতের পরিবের্ত তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। কেননা ইবাদত ও অন্যায় উভয়টি এক সঙ্গে করা হলো- আল্লাহর সঙ্গে সর্বোচ্চ সীমালংঘকারীর ন্যায় তামাশা করার শামিল।
এ কথাও স্মরণ রাখা জরুরি-
মানুষের ছোট ছোট গোনাহগুলো বার বার করলে তা কবিরা গোনায় পরিণত হয় এবং বার বার কবিরা গোনাহ করলে তা মানুষকে কুফরির দিকে নিয়ে যায়।
সুতরাং ৩টি প্রক্রিয়ায় নিজেদের ইবাদতে নিয়োজিত রাখা-
>> আল্লাহ তাআলাকে রব মেনে তাঁর দাসত্ব স্বীকার করা।
>> আল্লাহর নির্দেশ মেনে তাঁর আনুগত্য স্বীকার করা।
>> আল্লাহ তাআলার সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষা করা।
মুসলিম উম্মাহর উচিত সব সময় আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তাকে স্মরণ রেখে প্রতিটি কাজ সম্পন্ন করা। সব কাজে আল্লাহর স্মরণ ও তার দেখানো মতে কাজ করাই হবে বান্দার প্রকৃত ইবাদত।
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা এ কথাটির নির্দেশই দিয়েছেন। মানুষকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেছেন। সব কাজে নৈতিক মূল্যবোধ বজায় রেখে তা বাস্তবায়নের উপদেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের এ ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিটি কাজ যথাযথভাবে আদায় করার মাধ্যমে ইবাদতের পরিপূর্ণ হক আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।