ইসলাম শান্তি ও সম্প্রীতির একমাত্র মনোনীত ধর্ম। ইসলামি জীবন-যাপনে রয়েছে শান্তি আর শান্তি। কুরআন ও সুন্নাহর প্রতিটি ধাপে ধাপে তা আলোচিত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী আজ তা প্রমাণিত ও স্বীকৃত। মুসলিম কিংবা অমুসলিম যেই এ আদর্শে জীবন পরিচালনা করবে দুনিয়ার শান্তি তার জন্য সুনিশ্চিত। এ কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তারই প্রিয় সাহাবি হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে উপদেশ স্বরূপ মানুষের মানবীয় দোষ ও গুণের আলামতগুলো বর্ণনা করেছেন। যা জেনে নেয়া এবং এর ওপর আমল করা আবশ্যক। আর তাহলো-
হজরত আলি ইবন আবু তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হে আলি! মূসা আলাইহিস সালামের কাছে হারুন আলাইহিস সালামের মর্যাদা যেমন, আমার কাছে তোমার মর্যাদা তেমন। তবে আমার পরে আর কোনো নবি আসবে না। তাই তোমাকে কিছু অসিয়ত করি (উপদেশ)। যদি তুমি তা গ্রহণ কর তবে তুমি সুখী ও সৌভাগ্যবান হয়ে বেঁচে থাকবে। আর তুমি শহিদী মৃত্যু লাভ করবে। কেয়ামতের দিন তোমার প্রতিপালক তোমাকে ফকিহ ও আলেম করে ওঠাবেন।
হে আলি! মুমিনের আলামত ৩টি-
> সালাত পড়া।
> রাত জেগে ইবাদত করা।
> দান-খয়রাত করা।
হে আলি! মুনাফিকের আলামত ৩টি-
> মানুষের সামনে মনোযোগের সঙ্গে নামাজ আদায় করা।
> একা একা নামাজ আদায়ে অমনোযোগী হওয়া এবং তড়িগড়ি করা।
> মজলিসে আল্লাহকে স্মরণ করলেও নির্জনে তার রবকে ভুলে যায়।
হে আলি! জালেম অত্যাচারির আলামত ৩টি-
> শক্তি বা ক্ষমতা দিয়ে দুর্বলের ওপর কর্তৃত্ব করা।
> জোর করে মানুষের সম্পদ ছিনিয়ে নেয়া।
> খাদ্যদ্রব্যে হালাল-হারামের পার্থাক্য না করা।
হে আলি! হিংসুকের আলামত ৩টি-
> সামনে চাটুকারীতা করা।
> পেছনে গিবত করা।
> মানুষের দুঃখে আনন্দিত হওয়া।
হে আলি! মুনাফিকের আলামত ৩টি-
> মিথ্যা বলা।
> ওয়াদা ভঙ্গ করা।
> আমানতের খেয়ানত করা।
হে আলি! অলসের আলামত ৩টি-
> আল্লাহর ইবাদতে অলসতা করা।
> নামাজ এত বিলম্বে আদায় করা যে, তাতে নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হয়ে যায়।
> অপচয় ও ত্রুটি করা।
হে আলি! জ্ঞানীর আলামত ৩টি-
> দুনিয়াকে তুচ্ছ মনে করা।
> সহিষ্ণু তথা ক্ষমাশীল বা কোমল হৃদয় হওয়া।
> বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করা।
হে আলি! ধৈর্যশীলদের আলামত ৩টি-
> সম্পর্ক ছিন্নকারীর সঙ্গ সম্পর্ক রক্ষা করা।
> বঞ্চিতকারীকে দান করা। অর্থাৎ যে তাকে বঞ্চিত করে সে তাকে দান করবে।
> অত্যাচারীকে অভিশাপ না দেয়া।
হে আলি! আহাম্মকের আলামত ৩টি-
> আল্লাহর ফরজ ইবাদতে অবহেলা করা।
> আল্লাহর জিকির ছাড়াই অতিরিক্ত কথা বলা।
> আল্লাহর বান্দাদের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বের করা।
হে আলি! সৌভাগ্যবান ব্যক্তির আলামত ৩টি-
> হালাল খাওয়া।
> জ্ঞানীদের সঙ্গে বসা।
> ইমামের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা।
হে আলি! হতভাগ্য ব্যক্তির আলামত ৩টি-
> হারাম খাওয়া।
> ইলম থেকে দূরে থাকা।
> একা একা নামাজ আদায় করা।
হে আলি! মন্দ ব্যক্তির আলামত ৩টি-
> সে আল্লাহর আনুগত্য ভুলে যাওয়া।
> আল্লাহর বান্দাদের কষ্ট দেয়া।
> উপকারীর অপকরার করা।
হে আলি! সৎ ব্যক্তির আলামত ৩টি-
> ভালো কাজের মাধ্যমে সে তার ও অন্য ব্যক্তির মধ্যকার সুসম্পর্ক তৈরি করা।
> আল্লাহকে ভয় করে পাপ থেকে বেঁচে থাকা।
> নিজের জন্য যা পছন্দ করে অন্যের জন্যও তা পছন্দ করা।
হে আলি! মুত্তাকি ব্যক্তির আলামত ৩টি-
> অসৎ সঙ্গ বর্জন করা।
> মিথ্যা না বলা।
> হারাম থেকে বাঁচার জন্য অনেক হালালকেও ত্যাগ করা।
হে আলি! ফাসিক ব্যক্তির আলামত ৩টি-
> দুর্বলের উপর প্রধান্য বিস্তার করা।
> অল্পে তুষ্ট না হওয়া।
> উপদেশ থেকে উপকার গ্রহণ না করা।
হে আলি! সিদ্দিক বা সত্যবাদী ব্যক্তির আলামত ৩টি-
> ইবাদত প্রকাশ না করা।
> গোপনে দান-সদকা করা।
> বিপদ-মুসিবত কারো কাছে প্রকাশ না করা।
হে আলি! নিচু লোকের আলামত ৩টি-
> আল্লাহর নাফরমানি করা।
> প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া।
> ঔদ্ধত্য ও উচ্ছৃঙ্খলতাকে পছন্দ করা।
হে আলি! অপমানিত লোকের আলামত ৩টি-
> তার মধ্যে মিথ্যার প্রাচুর্য দেখা যাওয়া।
> অধিক পরিমাণে মিথ্যা শপথ করা।
> মানুষের কাছে নিজেকে প্রকাশ করা।
হে আলি! নিষ্ঠাবান ব্যক্তির আলামত ৩টি-
> সম্পদ অপছন্দ করা।
> প্রশংসা অপছন্দ করা।
> হারামকে অপছন্দ করে।
হে আলি! দানশীল ব্যক্তির আলামত ৩টি-
> ক্ষমতাবান হয়েও ক্ষমা করা।
> জাকাত দেয়া এবং
> দান-সদকা দেয়াকে পছন্দ করা।
হে আলি! কৃপণ ব্যক্তির আলামত ৩টি-
> কবরকে ভয় করা।
> ভিক্ষুককে ভয় পাওয়া।
> জাকাত না দেয়া।
হে আলি! তোমার প্রতি নসিহত-
> দুনিয়াতে দম্ভ করবে না। আল্লাহ দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।
> তোমার হৃদয়ে যেন ব্যাথা থাকে। কেননা আল্লাহ ব্যথিত হৃদয়কে পছন্দ করেন।
হে আলি! আল্লাহ তাআলা যদি তোমাকে ৪টি গুণ দিয়ে সম্মানিত করেন তবে দুনিয়াতে কেনো কিছু না পেলেও তোমার আক্ষেপ করার প্রয়োজন হবে না। আর গুণ ৪টি হলো-
> সত্য কথা বলা।
> আমানত রক্ষা করা।
> নিজে অভাব ও কার্পন্য মুক্ত হওয়া।
> হারাম থেকে উদর পেট রক্ষা করা।
অবিশ্বাসীদের সঙ্গে আচরণ
> হে আলি! প্রতিবেশী কাফের বা অবিশ্বাসী হলেও তার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে।
> মেহমান কাফের হলেও তার সঙ্গে সৌজন্যমূলক আচরণ করবে।
> পিতা-মাতা কাফের হলেও তাদের অনুগত থাকবে।
> ভিক্ষুক কাফের হলেও তাকে বঞ্চিত না করবে।
তিনি আরো বলেন-
হে আলি!
> তুমি রাতে নামাজ আদায় করবে, বকরি দোহনে যতটুকু সময় লাগে ততটুকু সময় হলেও। কারণ দিনে মসজিদে গিয়ে হাজার রাকাআত নামাজের চেয়ে রাতে ২ রাকাআত নামাজ আদায় করা উত্তম।
> যারা দিনে নামাজ আদায় করে তাদের চেয়ে রাতে নামাজ আদায়কারীর চেহারা অতি রৌশন বা আলোকিত।
হে আলি!-
> যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে হালাল উপার্জন থেকে খাবার খাওয়াবে, আল্লাহ তার আমলনামায় ১০ লাখ নেকি লিখবেন এবং অনুরূপ পাপ মোচন করবেন।
হে আলি!-
> তোমার কাছে কেউ কোনো প্রয়োজন নিয়ে উপস্থিত হলে, তুমি মনে করবে যে, এর আগমন তোমার প্রতি আল্লাহর বিশেষ রহমত। আল্লাহ তাআলা হয়তো তোমার গুনাহ মাফ করার ও প্রয়োজন পূরণ করার ইচ্ছা করেছেন।
হে আলি!
> তুমি অবশ্যই জামাআতে নামাজ আদায় করবে। কেননা জামাআতে নামাজ আদায় করতে যাওয়া আল্লাহর কাছে হজ্জ ও উমরার উদ্দেশ্যে গমন করার মতো।
হে আলি!
> যে ব্যক্তি ‘আল্লাহুম্মা বারিকলি ফিল মাউতি ওয়া ফিমা বাদাল মাউত।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমার মৃত্যুতে বরকত দিন এবং মৃত্যুর পরের জীবনেও বরকত দিন ‘ এ দোয়াটি প্রতিদিন ১০০ বার পড়বে, দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ তাআলা তাকে যা যা দান করেছেন, সে সবের কোনো হিসাব তার থেকে নেবেন না।
হে আলি
> হিংসা করবে না, হিংসা মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে য়ায়।
হে আলি!
> গিবত থেকে দূরে থাকবে। কারণ, গিবত শরাব পান করার চেয়েও নিকৃষ্ট।
হে আলি!
> তুমি দান করবে।
> দুনিয়াতে অল্পে তুষ্ট থাকবে। কেননা যে এরূপ করবে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা নবিগণের সঙ্গে তার হাশর করাবেন।
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত আলির মাধ্যমে মানবজাতির জন্য এ সব নসিহত রেখে গেছেন। যাতে রয়েছে মানবজাতির জন্য কল্যাণ ও বরকত। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সব ভালো ও সৎ গুণগুলোর মাধ্যমে জীবন সাজানোর তাওফিক দান করুন। আর যেগুলো খারাপ তা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। সুন্নাতি জীবন যাপনের মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালের সফলতা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।