প্রকাশ: ৭ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৪৮
দোয়া আল্লাহর সঙ্গে মানুষের সবচেয়ে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত, যা মানুষকে হতাশা থেকে মুক্তি দেয় এবং আত্মাকে শান্ত করে। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব” (সূরা গাফির: ৬০)। এই আয়াত স্পষ্ট করে দেয়, দোয়া শুধু চাওয়া নয়—এটি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও ভালোবাসার প্রকাশ।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “দোয়া ইবাদতের মূল” (তিরমিজি)। অর্থাৎ, নামাজ, রোজা, হজের মতো দোয়াও আল্লাহর সন্তুষ্টির অন্যতম পথ। দোয়ার মাধ্যমে মুমিন তার দুর্বলতা স্বীকার করে, আল্লাহর শক্তি ও ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। দোয়া মানুষকে অহংকার থেকে মুক্ত রাখে, কারণ দোয়া মানে আত্মসমর্পণ—স্বীকার করা যে, আমি পারি না, কিন্তু আল্লাহ পারেন।
জীবনের প্রতিটি সংকটেই দোয়ার দরজা খোলা থাকে। যখন সব পথ বন্ধ হয়ে যায়, তখন দোয়া সেই পথ খুলে দেয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “দোয়া হলো বিপদ আসার আগে মানুষের রক্ষাকবচ” (হাকিম)। তাই দোয়া কেবল বিপদে নয়, স্বস্তির সময়েও করা উচিত। কারণ কৃতজ্ঞ অবস্থায় দোয়া করলে আল্লাহ আরও দান করেন।
দোয়ার উত্তর সবসময় সঙ্গে সঙ্গে আসে না। কখনও আল্লাহ তা দেরিতে দেন, কখনও অন্যভাবে দেন, আবার কখনও তা পরকালের জন্য রেখে দেন। কিন্তু কোনো দোয়াই বৃথা যায় না। যেমন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “কোনো মুসলমান এমন দোয়া করে না যা গুনাহ বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার কারণ নয়, আল্লাহ তাঁকে তিনটি অবস্থার একটিতে তা দিয়ে দেন—তাৎক্ষণিক পূরণ করেন, বিপদ দূর করেন, অথবা পরকালে এর সওয়াব রাখেন” (মুসনাদে আহমদ)।
দোয়া করার সময় বিনয় থাকা জরুরি। কণ্ঠস্বর নিচু রাখা, মনোযোগ ও একাগ্রতা বজায় রাখা, এবং আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ পাঠ করে শুরু করাই উত্তম। হযরত উমর (রা.) বলতেন, “আমি দোয়ার কবুল হওয়া নিয়ে নয়, বরং দোয়া করার তাওফিক পাওয়া নিয়ে ভাবি; কারণ আল্লাহ কাউকে দোয়ার তাওফিক দেন মানেই তিনি তার প্রতি দয়াশীল।”
আমাদের সমাজে অনেকেই মনে করে—দোয়া শুধু সমস্যায় পড়লে করতে হয়। কিন্তু আসলে দোয়া প্রতিদিনের প্রয়োজন। নামাজ শেষে, ঘুমের আগে, বা ভোরের নিস্তব্ধতায় মনের কথা আল্লাহকে বলাই দোয়ার শ্রেষ্ঠ সময়। এভাবে নিয়মিত দোয়া করলে মন থেকে ভয় দূর হয়, আত্মা শক্তি পায়, আর জীবনে প্রশান্তি আসে।
দোয়া একপ্রকার আত্মিক প্রশিক্ষণও বটে। এটি মানুষকে ধৈর্যশীল, কৃতজ্ঞ ও বিনয়ী করে তোলে। যে ব্যক্তি দোয়া করে, সে কখনো হতাশ হয় না। কারণ সে জানে—আল্লাহ শুনছেন, দেখছেন এবং সময়মতো সাড়া দেবেন।
অতএব, দোয়া শুধু চাওয়া নয়—এটি মুমিনের বিশ্বাস, ভালোবাসা ও সংগ্রামের প্রতীক। যে মানুষ দোয়া করে, সে কখনো একা নয়। কারণ তার পাশে রয়েছেন দয়াময় আল্লাহ, যিনি সব শুনেন, সব জানেন, আর সর্বদা তাঁর বান্দার জন্য উত্তমটিই নির্ধারণ করেন।