প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:১৮
ইসলাম মানবজীবনে ধৈর্যকে এমন এক মহান গুণ হিসেবে উপস্থাপন করেছে যা দুনিয়া ও আখেরাত উভয় ক্ষেত্রেই কল্যাণ বয়ে আনে। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বহুবার ধৈর্যের কথা উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। মানুষের জীবনে বিপদ, পরীক্ষা ও সংকট আসবে, আর এসব মোকাবিলার সর্বোত্তম উপায় হলো ধৈর্য ধারণ করা।
রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর জীবনেও ধৈর্যের অনন্য দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। তায়েফে অপমানিত হয়ে ফিরে আসার সময় কিংবা মক্কার কষ্টকর দিনগুলোতে তিনি কখনো হতাশ হননি, বরং আল্লাহর উপর ভরসা রেখে ধৈর্যের সঙ্গে এগিয়ে গেছেন। তাঁর এই ধৈর্যই ইসলামের প্রচার ও বিস্তারে দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
ধৈর্যের গুরুত্ব এতটাই যে হাদিসে এসেছে, “ধৈর্য হলো ঈমানের অর্ধেক।” অর্থাৎ একজন মুমিন যত বেশি ধৈর্যশীল হবেন, তাঁর ঈমান ততই দৃঢ় হবে। মুমিনের জীবনে কষ্ট বা বিপদের সময় ধৈর্য ধারণ করা তাকে আল্লাহর আরও কাছাকাছি নিয়ে যায়।
কোরআনে বলা হয়েছে, “তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো।” এখানে ধৈর্য ও নামাজকে একসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে, যা প্রমাণ করে ধৈর্য শুধু নীরবে সহ্য করার নাম নয় বরং আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে দোয়া ও ইবাদতের মাধ্যমে শক্তি অর্জনের পথ।
সংকটপূর্ণ সময়ে মানুষ প্রায়ই অস্থির হয়ে পড়ে এবং নানা ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ইসলাম শেখায়, ধৈর্যশীল হওয়া মানে কঠিন সময়ে স্থির থাকা এবং আল্লাহর সিদ্ধান্তের উপর পূর্ণ ভরসা রাখা। এটি মানুষের অন্তরে শান্তি আনে এবং তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করে।
ধৈর্যের ফলে দুনিয়ায় মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়, আবার আখেরাতে এর জন্য অশেষ পুরস্কার রয়েছে। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন, ধৈর্যশীলদের পুরস্কার তিনি অগণিতভাবে দেবেন। এটি বোঝায়, ধৈর্যের প্রতিদান এতই মহান যা মানুষের হিসাবের বাইরে।
আজকের এই অস্থির সময়েও ধৈর্যই পারে সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনতে। পারিবারিক সমস্যা, অর্থনৈতিক সংকট বা সামাজিক অশান্তি—যেকোনো পরিস্থিতিতে ধৈর্যের শিক্ষা গ্রহণ করলে মানুষ হতাশ না হয়ে ইতিবাচকভাবে এগিয়ে যেতে পারে।
সুতরাং একজন মুমিনের জন্য ধৈর্য শুধু একটি গুণ নয়, বরং তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ধৈর্যশীল ব্যক্তি আল্লাহর প্রিয় বান্দা হন এবং তাঁর সাহায্য লাভ করেন। তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করা একজন মুসলমানের অপরিহার্য কর্তব্য।