প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৪১
বর্তমান সমাজে দুর্নীতি, ঘুষ, প্রতারণা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে এগুলো মারাত্মক গুনাহ এবং সমাজের স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি। ইসলাম সব ধরনের দুর্নীতি ও অনৈতিক কাজ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে এবং সৎপথে চলার শিক্ষা দিয়েছে। কুরআনে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে যারা অন্যায়ের মাধ্যমে মানুষের অধিকার হরণ করে তাদের জন্য পরিণতি ভয়াবহ।
কুরআনের সূরা আল-বাকারা’র ১৮৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, “তোমরা পরস্পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না এবং মানুষের সম্পদ অন্যায়ভাবে হরণ করার জন্য বিচারকদের নিকট উপস্থাপন করো না।” এই আয়াত সমাজে ন্যায়ের ভিত্তি গড়ে তোলার এবং দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য একটি সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) দুর্নীতিকে ঘৃণা করতেন এবং সব সময় ন্যায়পরায়ণতার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এক হাদিসে তিনি বলেন, “ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতা উভয়েই জাহান্নামে।” (তিরমিজি) এই হাদিস শুধু ঘুষের ব্যাপারেই নয় বরং সব ধরনের অন্যায় সুবিধা আদায়ের বিরুদ্ধে একটি কঠোর বার্তা দেয়।
ইসলামে দুর্নীতি কেবল অর্থনৈতিক ক্ষতিই করে না, বরং মানুষের নৈতিক মান ভেঙে দেয়। দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজে মানুষের পারস্পরিক আস্থা নষ্ট হয়, সমাজে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে এবং উন্নয়নের গতি বাধাগ্রস্ত হয়। তাই মুসলমানদের জন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া একটি নৈতিক দায়িত্ব।
ইসলামী ইতিহাসে দেখা যায়, খোলাফায়ে রাশেদিনের যুগে শাসকেরা দুর্নীতিকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দিতেন না। হযরত উমর (রা.) একাধিকবার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় এনেছিলেন। এটি প্রমাণ করে যে ইসলামে শাসনব্যবস্থার অন্যতম ভিত্তি হলো ন্যায়বিচার এবং স্বচ্ছতা।
আধুনিক সমাজে দুর্নীতি রোধ করতে হলে ব্যক্তিগত ও সামাজিক উভয় পর্যায়ে নৈতিকতার চর্চা জরুরি। আল্লাহভীতি বা তাকওয়া দুর্নীতি প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় শক্তি। একজন মানুষ যদি আল্লাহকে ভয় করে তবে সে কোনো অবস্থাতেই মানুষের হক নষ্ট করবে না বা অন্যায়ভাবে অর্থ অর্জনের চেষ্টা করবে না।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ইসলামের শিক্ষা আমাদের শেখায় যে, শুধু আইন নয় বরং মানুষের অন্তরে নৈতিকতার বোধ জাগ্রত করা প্রয়োজন। আইন ভঙ্গ করা যাবে না এই ভয়ে নয়, বরং আল্লাহর কাছে জবাবদিহির ভয়েই দুর্নীতি থেকে বিরত থাকা উচিত। এভাবে একটি সমাজকে দুর্নীতিমুক্ত করা সম্ভব।
আজকের দিনে মুসলমানদের জন্য শিক্ষা হলো, নিজেদের জীবনে সততা ও ন্যায়পরায়ণতা চর্চা করা এবং অন্যদেরও উৎসাহিত করা। এভাবেই সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। ইসলামের এই দিকনির্দেশনা মানলে একটি শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়ের সমাজ গড়ে ওঠা সম্ভব।