প্রকাশ: ৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২
ইবাদতের সর্বোচ্চ রূপ নামাজ, আর নামাজের আত্মা হলো খুশু বা বিনয়। খুশু মানে মনোযোগ ও অন্তরের উপস্থিতি, যা আল্লাহর সঙ্গে মানুষের সরাসরি সংযোগ সৃষ্টি করে। কিন্তু আজকের ব্যস্ত জীবনে অধিকাংশ মানুষ নামাজে দাঁড়ালেও মন থাকে অন্যত্র। ইসলামে খুশু অর্জনের গুরুত্ব তাই অপরিসীম, কারণ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “মানুষের জন্য নামাজ থেকে শুধু সেই অংশই গণনা হবে, যেখানে সে মনোযোগী ছিল।” (আবু দাউদ)
প্রথমত, খুশু অর্জনের জন্য প্রয়োজন নামাজের আগে মন প্রস্তুত করা। ওজুর সময় মনোযোগী থাকা, দোয়া পাঠ করা এবং বুঝে ওজু করা মানুষকে নামাজে মনোযোগী করে তোলে। আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই সফল হয়েছে সে মুমিনগণ, যারা নামাজে বিনয়াবনত।” (সূরা মুমিনুন, আয়াত ১-২) এই আয়াতেই বোঝা যায়, নামাজে মনোযোগ ও বিনয়ই প্রকৃত সফলতার চাবিকাঠি।
দ্বিতীয়ত, নামাজে অর্থ বুঝে কিরাত পাঠ করা খুশু বাড়ায়। অনেকে মুখস্থ করে পড়লেও অর্থ না জানার কারণে হৃদয়ে প্রভাব পড়ে না। তাই যতটা সম্ভব নামাজে পাঠ করা আয়াত ও দোয়ার অর্থ জানা জরুরি। এতে আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর সময় আত্মা জেগে ওঠে, মন শান্ত হয়, এবং প্রতিটি রুকু-সিজদা হয়ে ওঠে আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধার প্রকাশ।
তৃতীয়ত, নামাজের সময় দৃষ্টি নিচু রাখা এবং চোখে-চোখে কোনো কিছু অনুসরণ না করা খুশু রক্ষা করে। রাসূল (সা.) বলেছেন, “নামাজে চোখের নড়াচড়া শয়তানের চুরি।” তাই দৃষ্টি সিজদার স্থানে রাখাই উত্তম। এতে মন ছুটে যায় না এবং হৃদয় সংযত থাকে।
চতুর্থত, নামাজের স্থান ও পোশাকের পবিত্রতা মনোযোগ বাড়ায়। পরিচ্ছন্ন জামা, সুগন্ধি এবং শান্ত পরিবেশ মনকে প্রভাবিত করে। এক সাহাবি বলেছিলেন, “যখন আমি নামাজে দাঁড়াই, আমি এমন অনুভব করি যেন কিয়ামতের ময়দানে দাঁড়িয়ে আছি।” এই অনুভবই খুশুর সর্বোচ্চ উদাহরণ।
পঞ্চমত, নামাজ শেষে কিছু সময় চুপ থেকে আল্লাহর স্মরণ করা খুশুর ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। নামাজ শেষে তাসবিহ, হামদ, দোয়া পাঠ করলে মন আরও শান্ত হয় এবং পরবর্তী নামাজেও মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হয়।
ষষ্ঠত, দুনিয়াবি চিন্তা দূরে রাখতে হলে নামাজের আগে মোবাইল বা মনোযোগ বিঘ্নকারী বিষয়গুলো থেকে দূরে থাকা উচিত। খুশু চর্চা একদিনে হয় না, এটি ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে। আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসা যত বাড়বে, ততই খুশু গভীর হবে।
সপ্তমত, কুরআন তেলাওয়াত ও আল্লাহর মহিমা নিয়ে চিন্তা করলে খুশু স্থায়ী হয়। নামাজ তখন শুধু নিয়ম নয়, হয়ে ওঠে আত্মার প্রশান্তি। রাসূল (সা.) বলতেন, “হে বিলাল, নামাজের আহ্বান দাও, এর মাধ্যমে আমরা শান্তি পাব।”
অষ্টমত, খুশু শুধু নামাজের ভেতর নয়, জীবনধারায়ও প্রতিফলিত হয়। যে ব্যক্তি নামাজে মনোযোগী, সে জীবনে অন্যায় থেকে দূরে থাকে, কারণ নামাজ অশ্লীলতা ও পাপ থেকে বিরত রাখে। তাই খুশু অর্জন মানে শুধু নামাজে মনোযোগ নয়, বরং আল্লাহমুখী জীবন গঠন।