প্রকাশ: ৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৪৮
ইসলাম এমন এক পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা মানুষের কল্যাণকেই মূল লক্ষ্য হিসেবে স্থাপন করেছে। এই ধর্ম শুধু ইবাদত বা নামাজ-রোজার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সমাজে অন্য মানুষের জন্য কল্যাণকর কাজ করাকে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন, “তোমরা একে অপরকে সৎকাজ ও আল্লাহভীতিতে সহযোগিতা করো” (সূরা মায়িদা: ২)। অর্থাৎ ইসলামে মানবসেবা ও পরোপকার কেবল সামাজিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি ইমানের অংশ।
রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানবতার শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। তিনি বলেছেন, “মানুষের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে মানুষের উপকারে আসে” (দারাকুতনি)। এই হাদীস ইসলামে পরোপকারের মূল দর্শনকে স্পষ্ট করে দেয়—নিজের সুখের পাশাপাশি অন্যের কল্যাণে এগিয়ে আসা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য। তাই ইসলাম শিক্ষা দেয়, দুঃখে কষ্টে থাকা মানুষকে সাহায্য করা যেমন দান, তেমনি কারও মুখে হাসি ফোটানোও এক ধরনের ইবাদত।
পরোপকার কেবল ধনী-গরিবের মাঝে সম্পদ বিলানো নয়, বরং প্রতিটি মানুষের অবস্থান অনুযায়ী সহযোগিতার হাত বাড়ানোই প্রকৃত মানবসেবা। কেউ অর্থ দিয়ে, কেউ সময় দিয়ে, কেউ আবার জ্ঞান দিয়ে অন্যের উপকার করতে পারে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমার ভাইকে হাসিমুখে অভিবাদন জানানোও সদকা” (তিরমিজি)। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, পরোপকার মানে শুধু দান নয়, বরং প্রতিটি আচরণে ভালোবাসা ও সহানুভূতির প্রকাশ।
ইসলামে সমাজের দুর্বল শ্রেণির প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতিম, মিসকিন, প্রতিবন্ধী বা নিঃস্বদের পাশে দাঁড়ানো কেবল মানবিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি জাহান্নাম থেকে মুক্তির অন্যতম মাধ্যম। কুরআনে আল্লাহ বলেন, “তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত দাও, এবং নেক কাজের আদেশ দাও” (সূরা হাজ্জ: ৪১)। এখানে যাকাতের বিধানই প্রমাণ করে যে, সমাজে সম্পদের ভারসাম্য রক্ষা করা ইসলামের মৌলিক উদ্দেশ্য।
মানবসেবার অন্যতম বড় দিক হলো—অন্যের দুঃখে কষ্ট অনুভব করা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তুমি তোমার ভাইয়ের জন্য সেই জিনিসই কামনা করো, যা তুমি নিজের জন্য কামনা করো” (বুখারি ও মুসলিম)। এই হাদীস সমাজে সমবেদনা ও সহানুভূতির ভিত্তি স্থাপন করে। মুসলমান হিসেবে আমরা যখন অন্যের কষ্টে ব্যথিত হই, তখনই প্রকৃত মানবতার প্রকাশ ঘটে।
ইসলাম শিক্ষা দেয়, যে ব্যক্তি মানুষের জন্য কাজ করে, আল্লাহ তার জন্য কাজ করেন। তাই রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দুঃখ লাঘব করে, আল্লাহ কেয়ামতের দিনে তার দুঃখ দূর করবেন” (মুসলিম)। এই প্রতিশ্রুতি দেখায় যে মানবসেবা কেবল দুনিয়ার নয়, আখেরাতের সফলতার পথও প্রশস্ত করে।
আজকের বিশ্বে স্বার্থপরতা ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক মানসিকতা বেড়ে যাওয়ায় মানবসেবার মূল্যবোধ অনেকাংশে হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ ইসলাম এই সংকট থেকে মুক্তির পথও দেখায়। সমাজে যদি প্রতিটি মানুষ ইসলামের এই শিক্ষা অনুসরণ করে—অন্যের মঙ্গলই নিজের মঙ্গল—তবে দারিদ্র্য, বিভেদ ও অবিচার দূর হবে।
অতএব, ইসলামে পরোপকার ও মানবসেবা কেবল একটি নৈতিক আদর্শ নয়, বরং এটি মুসলমানের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের উচিত প্রতিদিনের জীবনে এই মূল্যবোধ ধারণ করা—পরিবারে, সমাজে, এমনকি কর্মক্ষেত্রেও। কারণ মানবতার সেবাই ইসলামের আসল সৌন্দর্য, আর অন্যের উপকারই একজন প্রকৃত মুমিনের পরিচয়।