প্রকাশ: ৪ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৩১
আত্মসংযম এমন এক গুণ যা একজন মানুষকে নৈতিকভাবে দৃঢ় করে তোলে এবং তাকে পাপ ও অশুদ্ধতা থেকে রক্ষা করে। ইসলাম আত্মসংযমকে শুধু একটি নৈতিক মূল্য নয়, বরং আল্লাহর নিকট প্রিয়তম বৈশিষ্ট্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। কুরআনে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি নিজের প্রবৃত্তিকে সংযত করেছে, নিশ্চয়ই সে সফল হয়েছে” (সূরা আশ-শামস, আয়াত ৯-১০)। এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, প্রকৃত সফলতা সেই ব্যক্তির যিনি নিজের মন ও ইচ্ছাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।
মানুষের জীবনে নানা প্রলোভন আসে, কখনও অর্থ, কখনও ক্ষমতা, কখনও লালসা বা রাগ। এগুলোর মধ্যে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে মানুষ অমানবিক কাজেও জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ইসলাম শিক্ষা দেয়, নিজের নফস বা প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করাই ঈমানের পরিপূর্ণতার চিহ্ন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “বলবান সে নয়, যে কুস্তিতে অন্যকে পরাজিত করে; বরং বলবান সে, যে রাগের সময় নিজেকে সংযত রাখতে পারে।” (সহিহ বুখারি)।
আত্মসংযম শুধু রাগ বা কামনা নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করা। খাওয়া-দাওয়া, কথা বলা, ব্যয় করা—সবকিছুতেই সংযমের আদেশ দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন, “খাও ও পান করো, কিন্তু অপচয় করো না; নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না” (সূরা আরাফ, আয়াত ৩১)।
বর্তমান সমাজে আত্মসংযমের অভাব আমাদের নানা সামাজিক ও পারিবারিক সংকটের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গি, ক্রোধ, হিংসা ও লালসার কারণে মানুষ নিজের নৈতিক সীমারেখা অতিক্রম করছে। ইসলাম এই অনিয়ন্ত্রিত প্রবণতাকে রুখে দিয়ে মানুষকে সচেতন জীবনযাপনের শিক্ষা দেয়।
আত্মসংযম মানুষকে ধৈর্যশীল করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ খুলে দেয়। রমজান মাসে রোজা রাখার অন্যতম উদ্দেশ্যও এই আত্মসংযম চর্চা করা। দিনভর ক্ষুধা ও তৃষ্ণা সহ্য করে একজন মুসলমান নিজের মনকে শুদ্ধ করে তোলে এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্য বৃদ্ধি করে।
এমনকি আর্থিক দিক থেকেও আত্মসংযম অপরিহার্য। ইসলাম শিখিয়েছে, ধন-সম্পদ আল্লাহর একটি পরীক্ষা। তাই সম্পদ অর্জন বা ব্যয়ের সময় সংযম ও ন্যায়ের পথেই থাকতে হবে। অসংযম মানুষকে লোভী করে তোলে, আর লোভ মানুষকে অন্যায়ের দিকে ঠেলে দেয়।
পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কে আত্মসংযমের গুরুত্বও অপরিসীম। রাগের বশে কটু কথা বলা, সম্পর্ক নষ্ট করা বা হিংসা করা—সবই আত্মসংযমের অভাবের লক্ষণ। নবী করিম (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের রাগ সংযত করে, কিয়ামতের দিনে আল্লাহ তাকে মানুষের সামনে সম্মানিত করবেন।”
পরিশেষে বলা যায়, আত্মসংযম শুধু ধর্মীয় কর্তব্য নয়, এটি মানবিক পরিপূর্ণতার চাবিকাঠি। যে ব্যক্তি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সে সমাজে শান্তি ও ন্যায়ের বার্তা ছড়াতে পারে। ইসলাম সেই আত্মসংযমী মানুষকেই সফল ও মর্যাদাবান বলে ঘোষণা করেছে।