প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ১১:২৮
আল্লাহ তাআলা অসীম গুণের অধিকারী, কিন্তু তিনি তাঁর পবিত্র কোরআনে ও রাসুল (সা.)-এর হাদিসে যেসব গুণবাচক নাম প্রকাশ করেছেন, তার মধ্যে ৯৯টি নাম মুসলমানদের কাছে বিশেষভাবে পরিচিত। এই ৯৯টি নামকে বলা হয় ‘আস্মা-উল-হুসনা’ অর্থাৎ সুন্দরতম নামসমূহ। হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহর নিরানব্বইটি নাম রয়েছে, যে ব্যক্তি এসব নাম মুখস্থ রাখবে (বা বুঝে আমল করবে) সে জান্নাতে যাবে।’ (বুখারি: ২৭৩৬, মুসলিম: ২৬৭৭)। আল্লাহর এসব গুণবাচক নাম শুধু মুখে উচ্চারণ করলেই হবে না, বরং এসব নামের অর্থ অনুধাবন করে জীবনে বাস্তবায়ন করাই একজন প্রকৃত মুসলমানের কাজ। যেমন ‘আর-রহমান’ মানে যিনি পরম দয়ালু। যদি আমরা দয়ালু হতে পারি, তবে আল্লাহর এই নামের প্রভাব আমাদের মধ্যে প্রতিফলিত হয়। আবার ‘আল-আদল’ অর্থাৎ যিনি ন্যায়বিচারক—এ গুণটিও যদি আমরা সমাজে প্রতিষ্ঠা করি, তবে তাও আল্লাহর গুণ ধারণ করা হিসেবেই বিবেচিত হবে।
মুসলিম উম্মাহর জন্য ‘আস্মা-উল-হুসনা’ পাঠ এবং চর্চা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। অনেক আলেম বলেন, প্রতিদিন নির্দিষ্ট কিছু নাম জপ করলে অন্তরে প্রশান্তি আসে, দুশ্চিন্তা দূর হয় এবং আল্লাহর কৃপা লাভ হয়। যেমন—‘ইয়া রহিম’ পাঠ করলে হৃদয়ে নম্রতা ও দয়া আসে, ‘ইয়া শাফি’ পাঠ করলে অসুস্থতা থেকে আরোগ্য লাভের আশা করা যায়। অনেক হাদিসে দেখা যায়, সাহাবিরা বিভিন্ন দোয়ায় আল্লাহর গুণবাচক নাম ব্যবহার করতেন। এ থেকে বোঝা যায়, দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে কিছু চাইবার সময় তাঁর গুণবাচক নাম দিয়ে আহ্বান করলে দোয়া কবুলের সম্ভাবনা বাড়ে।
আস্মা-উল-হুসনা মুখস্থ রাখার পাশাপাশি আমাদের উচিত এগুলোর অর্থ জানা এবং প্রতিদিনের জীবনে তা চর্চা করা। যারা শিশুদের ইসলামি শিক্ষায় আগ্রহী, তাদের জন্য এই নামগুলো মুখস্থ করানো এবং তা দিয়ে গল্প বা উদাহরণ শোনানো খুব উপকারী হতে পারে। এতে শিশুরা আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও ভক্তি নিয়ে বেড়ে ওঠে। বর্তমান যুগে মোবাইল অ্যাপ বা ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমেও এসব নাম শেখা ও স্মরণ করা সহজ হয়ে গেছে।
একটি সুন্দর অনুশীলন হতে পারে, প্রতিদিন সকালে একটি করে নাম স্মরণ করা এবং সারা দিন সেই নামের গুণে জীবন চালানোর চেষ্টা করা। যেমন আজ যদি ‘আল-গফফার’ অর্থাৎ ‘অত্যন্ত ক্ষমাশীল’ নামটি স্মরণ করি, তবে সারা দিন আমরা নিজেও অপরকে ক্ষমা করায় উদ্বুদ্ধ হতে পারি। এর ফলে আমাদের সমাজে সহনশীলতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে উঠবে। এভাবেই আল্লাহর ৯৯টি নাম কেবল জপ করার বিষয় নয়, বরং তা জীবন বদলে দেওয়ার মতো শক্তিশালী মাধ্যম।
সবশেষে বলা যায়, আল্লাহর নামসমূহ আমাদের কাছে শুধু নাম নয়, বরং তা একেকটি শিক্ষা, নীতিমালা ও পথনির্দেশ। এগুলোকে জানলে আল্লাহকে চেনা সহজ হয়, তাঁর প্রতি ভালোবাসা ও ভয় বাড়ে, এবং ইমান আরও সুদৃঢ় হয়। তাই আসুন, আমরা সকলে আল্লাহর ৯৯টি নাম মুখস্থ করি, তার অর্থ অনুধাবন করি এবং তা জীবনে বাস্তবায়নের চেষ্টা করি।