প্রকাশ: ২০ মে ২০২৫, ১০:৪৪
আখিরাতে সফলতা লাভ করার জন্য ইসলামে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ‘তাকওয়া’ বা আল্লাহভীতি অর্জনের ওপর। আল-কুরআনের বহু আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের তাকওয়া অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাকওয়াবানদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। সূরা আল-বাকারা-তে আল্লাহ বলেন, "এই কুরআন হিদায়াত তাদের জন্য, যারা তাকওয়াবান।" তাকওয়া হলো এমন একটি গুণ, যা একজন মুমিনকে সব ধরনের পাপ থেকে দূরে রাখে এবং তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে পরিচালিত করে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “আল্লাহ তোমাদের চেহারা বা সম্পদের দিকে তাকান না, বরং তোমাদের অন্তর ও আমলের দিকে তাকান।” (সহীহ মুসলিম)। অর্থাৎ আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করে আমাদের তাকওয়ার ওপর, বাহ্যিক কিছুতে নয়। তাই প্রতিটি মুমিনের উচিত নিজেদের অন্তর পরিশুদ্ধ করা এবং জীবনযাপন আল্লাহভীতির ভিত্তিতে পরিচালিত করা।
আসলে, একজন মানুষ যত বেশি তাকওয়া অর্জন করবে, তত বেশি সে গুনাহ থেকে দূরে থাকবে এবং নেক আমলের প্রতি আগ্রহী হবে। একমাত্র তাকওয়ার মাধ্যমেই মানুষ আল্লাহর রহমত লাভ করতে পারে। তাকওয়ার ফলাফল হিসেবে আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য উত্তরণের পথ খুলে দেন, তাকে রিযিক দেন এমনভাবে যা সে কল্পনাও করতে পারে না (সূরা তালাক, আয়াত ২-৩)।
তাকওয়ার আরেকটি দিক হলো মানুষের চারিত্রিক উৎকর্ষতা। একজন তাকওয়াবান ব্যক্তি কখনো কারও হক নষ্ট করে না, অন্যের ক্ষতি করে না, বরং সবসময় সুবিচার, দয়া ও ন্যায়পরায়ণতায় উদ্বুদ্ধ থাকে। এভাবে তাকওয়া ব্যক্তি ও সমাজকে সুন্দর করে তোলে।
আমরা যদি বর্তমান সমাজের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাই অধিকাংশ সংকটের মূলে রয়েছে তাকওয়ার অভাব। অসততা, দুর্নীতি, অবিচার—সবকিছুর পেছনেই আছে আল্লাহভীতি না থাকার করুণ পরিণতি। তাই ব্যক্তি ও সমাজজীবনে শান্তি আনতে হলে আমাদের প্রথম কাজ হওয়া উচিত তাকওয়ার ভিত্তি গড়ে তোলা।
তাকওয়া অর্জন সহজ নয়, কিন্তু চেষ্টার মাধ্যমে তা সম্ভব। কুরআন তিলাওয়াত, নামাজে খুশু-খুযু, রোজা রাখা, দোয়া ও আত্মসমালোচনার মাধ্যমে ধীরে ধীরে একজন মুসলিম তার অন্তরে তাকওয়ার আলো সৃষ্টি করতে পারে। আর একবার তাকওয়ার স্বাদ পাওয়া গেলে, সে আর গুনাহের পথে ফিরতে চায় না।
পরিশেষে বলা যায়, আখিরাতের সাফল্য কেবল নামাজ-রোজা নয়, বরং সেই আমলগুলোর পেছনে যে আল্লাহভীতি ও আন্তরিকতা থাকে, তাকেই আল্লাহ কবুল করেন। তাই আসুন, আমরা সবাই নিজেদের মধ্যে প্রকৃত তাকওয়া অর্জনের চেষ্টা করি এবং জান্নাতের পথে এগিয়ে যাই।