প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৫, ১০:৩০
ঈদুল আজহা মুসলিম জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব, যা কেবল আনন্দ আর উৎসবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি এক মহৎ আত্মত্যাগের স্মৃতি বহন করে। হজরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর আদেশ পালনে পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি দিতে প্রস্তুত হয়ে যে আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন, সেটাই ঈদুল আজহার মূল শিক্ষা। এই আত্মত্যাগ আমাদের শেখায় কীভাবে নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করতে হয়।
এই উৎসব কেবল পশু কোরবানির মাধ্যমে সীমাবদ্ধ নয়, বরং মনের ভেতরের অহংকার, লোভ, হিংসা, হিংস্রতা এবং অপবিত্র চিন্তা কোরবানিও এই ঈদের একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক। ঈদুল আজহা আমাদের আহ্বান জানায় আত্মশুদ্ধির, আল্লাহর প্রতি অন্ধ আনুগত্যের, এবং মানবতার কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করার।
আধুনিক সমাজে এই উৎসবের গুরুত্ব আরো বেশি, কারণ দিনদিন মানুষ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে আত্মত্যাগের মনোভাব হারিয়ে যাচ্ছে। ঈদুল আজহা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—একটি সমাজ কেবল তখনই সুশৃঙ্খল ও সুন্দর হয়, যখন ত্যাগের মনোভাব থাকে সকলের মধ্যে।
এই দিনে কোরবানির পশু জবাইয়ের মাধ্যমে শুধু এক ধর্মীয় রীতি পালনই নয়, বরং সমাজের গরিব, দুস্থ ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোরও সুযোগ তৈরি হয়। ইসলাম শিক্ষা দেয়, কোরবানির মাংস তিন ভাগ করে একভাগ আত্মীয়স্বজন, একভাগ দরিদ্র ও একভাগ নিজের জন্য রাখার মাধ্যমে সাম্য ও মানবিকতা প্রতিষ্ঠা করতে।
আল্লাহ বলেন, “তাদের গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, বরং তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে যায়।” (সুরা হজ, আয়াত ৩৭)। এই আয়াত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় কোরবানির মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহভীতি এবং ন্যায়পরায়ণতা অর্জন।
আসুন, এবারের ঈদুল আজহায় আমরা শুধু পশু কোরবানিতেই সীমাবদ্ধ না থেকে আত্মিক শুদ্ধি, মানুষের প্রতি মমতা এবং আল্লাহর আদেশ পালনে আত্মত্যাগের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করি। তবেই ঈদুল আজহার প্রকৃত তাৎপর্য পূর্ণতা পাবে।