প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৫, ২১:৩৪
লুটপাট ও অর্থপাচারের অভিযোগে শেখ হাসিনা পরিবারসহ দেশের ১০টি প্রভাবশালী শিল্পগোষ্ঠীর প্রায় পৌনে দুই লাখ কোটি টাকার সম্পদ ও অর্থ জব্দ করেছে সরকার। এসব জব্দকৃত অর্থের একটি অংশ দিয়ে ‘লুটের টাকা ব্যবস্থাপনা তহবিল’ গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার (১৯ মে) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং বিএফআইইউ প্রধান এ এফ এম শাহিনুর ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, শেখ পরিবার ও ১০টি শিল্পগোষ্ঠীর এক লাখ ৩০ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকার অর্থ অ্যাটাচমেন্ট করা হয়েছে। দেশের মধ্যে ১৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার সমপরিমাণ টাকাসহ ৪২ হাজার ৬১৪ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ অবস্থায় রয়েছে। বিদেশেও ২৫৩ কোটি টাকার সম্পদ শনাক্ত ও জব্দ করা হয়েছে।
এই অর্থের একটি অংশ দিয়ে দুটি তহবিল গঠনের চিন্তাভাবনা করছে সরকার। একটির মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এবং অপরটি জনহিতকর কাজে ব্যয় করা হবে। এই দুই তহবিল গঠন সম্পূর্ণ আইনগত কাঠামোর আওতায় পরিচালিত হবে বলে জানান গভর্নর।
সরকার গঠিত ১১টি তদন্ত দলের অনুসন্ধানে শেখ পরিবারসহ সংশ্লিষ্ট শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কর ফাঁকি, ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি ও অর্থপাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য উঠে এসেছে। এসব ঘটনায় ইতোমধ্যে একাধিক মামলা হয়েছে এবং বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে একটি বিশেষ অধ্যাদেশ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করছে। বিদেশে থাকা সম্পদ ফ্রিজ করা, পুনরুদ্ধার ও ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এসব কাজের জন্য মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স (এমএলএ) পদ্ধতি অনুসরণ করছে সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থপাচার রোধ ও লুটপাট ঠেকাতে আমাদের আইনগত ও প্রশাসনিক কাঠামো আরও শক্তিশালী করতে হবে। এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, সে দিকেও নজর দেওয়া হবে।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে সময় লাগলেও সরকারের দৃঢ় অবস্থানের কারণে আশা করা যাচ্ছে, ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্নীতি ও লুটপাটে যুক্তরা কেউ রেহাই পাবে না এবং দেশের জনগণের অর্থ সঠিক ব্যবস্থাপনায় কাজে লাগবে।