অনেকের কাছে মুক্তির রজনী পবিত্র লাইলাতুল বরাত

নিজস্ব প্রতিবেদক
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী- বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ
প্রকাশিত: বুধবার ১২ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:০৯ অপরাহ্ন
অনেকের কাছে মুক্তির রজনী পবিত্র লাইলাতুল বরাত

শবে বরাত ইসলামের অন্যতম ফজিলতপূর্ণ রাত, যা শাবান মাসের ১৫ তারিখে পালিত হয়। এই রজনীতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের গুনাহ ক্ষমা করেন এবং ভাগ্যলিপি নির্ধারণ করেন বলে বলা হয়। রাসুল (সা:) একে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা শাবানের মধ্যরাত হিসেবে অভিহিত করেছেন। ‘শব’ ফারসি শব্দ, যার অর্থ রাত, আর ‘বারাআত’ অর্থ মুক্তি, নিষ্কৃতি বা পবিত্রতা। তাই শবে বরাতের অর্থ দাঁড়ায় মুক্তির রজনী। এ রাতে পাপী বান্দাদের ক্ষমা করে দেওয়া হয় এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রদান করা হয়।  


পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, "হা-মীম, এ স্পষ্ট কিতাবের শপথ! নিশ্চয়ই আমি তা বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি।" (সুরা দুখান: ১-৪)। তাফসীরবিদদের মতে, বরকতময় রাত বলতে কেউ লাইলাতুল কদর বোঝান, আবার কেউ শবে বরাত বোঝান। তাফসীরে বাগভীতে বলা হয়েছে, শবে বরাতে আল্লাহ তায়ালা পরবর্তী এক বছরের ভাগ্য নির্ধারণ করেন, যা লাইলাতুল কদরে ফেরেশতাদের কাছে ন্যস্ত করা হয়।  


এই মাসের বিশেষ গুরুত্বের মধ্যে অন্যতম হল কিবলা পরিবর্তনের ঘটনা। হিজরতের প্রায় দেড় বছর পর শাবান মাসে কিবলা বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে পরিবর্তন হয়ে কাবা শরীফ নির্ধারিত হয়। এ বিষয়ে কোরআনে বলা হয়েছে, "তোমরা যেখানেই থাকো না কেন ওই (কাবার) দিকেই মুখ ফিরাও।" (সুরা বাকারা: ১৪৪)। এছাড়া, রাসুল (সা:)-এর প্রতি দুরুদ পাঠের নির্দেশনাসংবলিত আয়াতও এ মাসে নাজিল হয়, যেখানে বলা হয়েছে, "হে মোমিনরা! তোমরাও তাঁর প্রতি দুরুদ পাঠ করো এবং যথাযথভাবে সালাম পেশ করো।" (সুরা আহযাব: ৫৬)।  


শবে বরাতের রাতে নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার এবং দোয়া-ইস্তেগফারের মাধ্যমে ইবাদত করা উত্তম। রাসুল (সা:) বলেছেন, "শাবানের মধ্যরাতে তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং পরদিন রোজা রাখো।" (মিশকাত)। তিনি আরও বলেছেন, "এ রাতে আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের ক্ষমা করেন, তবে মুশরিক ও শত্রুতাপোষণকারী ব্যক্তিদের ক্ষমা করেন না।" (ইবনে মাজাহ)।  


হাদিসে উল্লেখ আছে, এই রাতে আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের প্রতি বিশেষ রহমত বর্ষণ করেন। একবার আয়েশা (রা:) দেখলেন, রাসুল (সা:) জান্নাতুল বাকীতে মোনাজাতরত অবস্থায় আছেন। তখন তিনি বললেন, "নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা শাবানের ১৫ তারিখ রাতে বান্দাদের পাপ ক্ষমা করেন, তবে মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারীকে নয়।" (তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ)।  


শবে বরাতের রাতব্যাপী ইবাদত ও দিনের রোজা বিশেষভাবে সুন্নাত। তবে এই রাতে অতি বাড়াবাড়ি করে আনন্দ-উল্লাস, আতশবাজি, পোলাও-বিরিয়ানি খাওয়া ইসলামী শিক্ষার পরিপন্থী। সাহাবায়ে কেরাম এবং ওলামায়ে কেরাম এ রাতে ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। তাই আমাদেরও উচিত রাসুল (সা:) ও সাহাবাদের আদর্শ অনুসরণ করা এবং এই রাতের পবিত্রতা রক্ষা করা। আল্লাহ আমাদের সঠিকভাবে শবে বরাত পালন করার তৌফিক দান করুন, আমিন।