প্রকাশ: ৩ জুলাই ২০২৫, ২১:৭
কুমিল্লার মুরাদনগরে এক নারীর ধর্ষণের ঘটনার রেশ না কাটতেই বৃহস্পতিবার সকালে একই উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামে মাদক ব্যবসার অভিযোগে মা, ছেলে ও মেয়েকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়। এ নির্মম ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা। দেবীদ্বারের নিউমার্কেট এলাকায় ভূমিহীন সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ধর্ষণ, নিপীড়ন ও খুনের মতো ঘটনা যখন ঘটছে, তখন রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরকে দোষারোপের প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত থাকছে, যা সামাজিক অস্থিরতা প্রশমনে কোনো ভূমিকা রাখছে না।
এদিন মানববন্ধনের প্রধান অতিথি সিপিবির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য কমরেড পরেশ কর বলেন, দেশে বিচার ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও ক্রমবর্ধমানভাবে মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে। তিনি বলেন, মুরাদনগরের ঘটনা আবারো প্রমাণ করলো যে, মবসন্ত্রাস রোধে সরকার ও সমাজের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। অপরাধী যেই হোক, তাকে আইন অনুযায়ী বিচার করতে হবে। এ ধরনের গণপিটুনির সংস্কৃতি যদি বন্ধ করা না যায়, তাহলে পুরো দেশই এক ভয়াবহ দিকের দিকে এগিয়ে যাবে।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন ভূমিহীন সংগঠনের নেত্রী রোকেয়া বেগম। সঞ্চালনায় ছিলেন যুব ইউনিয়নের কুমিল্লা জেলা সহ-সভাপতি মো. বিল্লাল হোসেন। বক্তৃতা করেন দেবীদ্বার উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি এবিএম আতিকুর রহমান বাশার, নিজেরা করি সংস্থার বিভাগীয় সংগঠক গুলশান আরা, সাংবাদিক শফিউল আলম রাজীব, ভূমিহীন আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোখলেসুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক গফুর মিয়া, রসুলপুর কমিটির সাধারণ সম্পাদক হান্নান মূন্সী এবং ছাত্র ইউনিয়ন কুমিল্লা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক দীপ্ত দেবনাথ।
বক্তারা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্ষণ বা নির্যাতনের ছবি বা ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া যেন আরেক ধরণের সহিংসতা হয়ে উঠছে। এ অপরাধ রুখতে না পারলে সমাজে বিভ্রান্তি ও উত্তেজনা ছড়াবে। পাশাপাশি ধর্ষণের ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার আগেই গণপিটুনির মতো অবিচারিক শাস্তি প্রয়োগ মানবাধিকারের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
মানববন্ধন ও সমাবেশের আগে বিক্ষোভ মিছিল উপজেলা সদরের বিভিন্ন প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। অংশগ্রহণকারীরা সমাজে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যকর ভূমিকায় জোর দাবি জানান। বক্তারা আরও বলেন, অপরাধ দমন করতে হলে সমাজের সব পক্ষকে একসাথে কাজ করতে হবে এবং দলীয় বিরোধ ছেড়ে যৌথভাবে সামাজিক অস্থিরতা প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে।
মুরাদনগরের এই ঘটনাগুলো নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে সমাজবিজ্ঞানী ও মানবাধিকারকর্মীদেরও। তারা মনে করছেন, দ্রুত বিচার না হওয়া এবং সামাজিক নিরাপত্তার ঘাটতিই মানুষকে আইন হাতে তুলে নিতে উৎসাহিত করছে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক একটি প্রবণতা।