পরকালের শাস্তি দুনিয়াতে চাওয়া যাবে কি?

নিজস্ব প্রতিবেদক
ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২৬শে আগস্ট ২০২১ ০৯:৫৮ পূর্বাহ্ন
পরকালের শাস্তি দুনিয়াতে চাওয়া যাবে কি?

কোনো মুমিনের জন্যই শোভনীয় নয় যে, অতি আবেগী হয়ে দুনিয়াতে পরকালের শাস্তি কামনা করা। এমন কিছু দোয়া আছে যেগুলো মুমিন বান্দার কামনা করা উচিত নয়। কেন এভাবে দোয়া করা উচিত নয়? এ সম্পর্কে হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকনির্দেশনাই বা কী?


দোয়া সম্পর্কে হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, ‘দোয়াই ইবাদত; দোয়াই ইবাদতের মূল।' কিন্তু পরকালের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তির আশায় দুনিয়াতে শাস্তি কামনা করা যাবে না। কারণ, পরকালের শাস্তি দুনিয়াতে সহ্য করার মতো হিম্মত করো নেই। হাদিসে বর্ণনা থেকেও তা প্রমাণিত।


কোনো মুমিনের জন্য এ দোয়া করা উচিত নয়। এভাবে দোয়া করা সুন্নাহ পরিপন্থী কাজ। হাদিসে পাকে এসেছে-হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেলেন। (গিয়ে) দেখলেন, (অসুস্থতায়) সে অত্যন্ত কাতর হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য শুকিয়ে পাখির মত হয়ে গেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি কি আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে কিছু কামনা করেছিলে? সে বললো- ‘হ্যাঁ’। আমি বলেছিলাম-


‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আখিরাতে যে শাস্তি দেবেন; তা দুনিয়াতেই ত্বরান্বিত করুন।’


(এবার) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ! তোমার এমন শক্তি নেই যে, তুমি তা (পরকালের শাস্তি) বরদাশত করবে? তবে তুমি এরূপ দোয়া করবে যে-

اَللهُمَّ اَتِنَا فِىْ الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّ فِىْ الْاَخِرَةِ حَسَنَةً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّار

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আতিনা ফিদদুনইয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আখেরাতি হাসানাতাঁও ওয়া ক্বিনা আজাবান নার।’


অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদের দুনিয়াতে ও পরকালে কল্যাণ দান করুন। আর জাহান্নাম থেকে আমাদের নাজাত দিন।’এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জন্য দোয়া করলেন। আল্লাহ তাকে নিরাময় দান করলেন।’ (মুসলিম)মনে রাখা জরুরি, অতি আবেগে আরও যেসব দোয়া করা মুমিনের জন্য উচিত নয়; তাহলো-


১. অসুস্থতায় ধৈর্য কামনা না করা


অসুস্থতার সময় দোয়াতে সবর/ধৈর্য কামনা না করা। অসুস্থতার সময় এভাবে না বলা যে, ‘হে আল্লাহ! আমাকে ধৈর্য দাও।’ হাদিসে এসেছে-


হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে (এভাবে) দোয়া করতে শুনলেন- ‘হে আল্লাহ! আমাকে সবর/ধৈর্য দান করুন।’ তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- ‘তুমি তো আল্লাহর কছে মুসিবত কামনা করছ। বরং তুমি আফিয়াত (সুস্বাস্থ্য) চাও। (তিরমিজি)


এ হাদিস থেকে প্রমাণিত অনেক সময় সবর কামনা করার অর্থ হলো, মুসিবত কামনা করা। তবে যদি কারো মুসিবত এসে যায়; তখন সবর বা ধৈর্যধারণের দোয়া করা যাবে। কেননা তখন আল্লাহ তাআলা এভাবে দোয়া করার উপদেশ দেন-

رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ


উচ্চারণ : ‘রাব্বানা আফরিগ আলাইনা সাবরাওঁ ওয়া ছাব্বিত আক্বদামানা ওয়াংছুর না আলাল কাওমিল কাফিরিন।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ আমাদের মনে ধৈর্য সৃষ্টি করে দিন এবং আমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখুন আর আমাদের সাহায্য করুন কাফের জাতির বিরুদ্ধে।’( সুরা বাকারা : আয়াত ২৫০)


২. দোয়া কবুলে তাড়াহুড়ো করা যাবে না


সব সময় আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে থাকা। দোয়া কবুলে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে দোয়া করার পর এমনটি না বলা যে- ‘অনেক দোয়া করেছি/করছি; কিন্তু তা কবুল হচ্ছে না! হাদিসে পাকে এসেছে-হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের দোয়া তখনই কবুল করা হয়; যখন সে তাড়াহুড়ো না করে।অর্থাৎ এরূপ না বলে যে, আমি আমার রবের কাছে দোয়া করলাম অথচ কবুল করা হয়নি।’ (মুসলিম)


৩. মৃত্যু কামনা করা যাবে না

মৃত্যুর জন্য দোয়া করা যাবে না। মৃত্যু কামনা করতে নিষেধ করেছেন স্বয়ং বিশ্বনবি। হাদিসে পাকে এসেছে-


হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কেউ মৃত্যু কামনা করবে না। আর মৃত্যুর আগে এ জন্য দোয়াও করবে না। কেননা মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের নেক আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। আর মুমিনের জীবিত থাকা কল্যাণ; নেকিই বৃদ্ধি করে।’ (মুসলিম)


একান্তই যদি কেউ মৃত্যুর দোয়া করতে চায় তবে এভাবে বলা-

اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِي وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِي


উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আহয়িনি মা কানাতিল হায়াতু খাইরান লি ওয়া তাওয়াফফানি ইজা কানাতিল ওয়াফাতু খাইরান লি।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ যতদিন আমার জীবন উত্তম হয় ততদিন জীবিত রাখুন, আর যখন আমার মৃত্যু উত্তম হয় তখন মৃত্যু দান করুন।’ (বুখারি)


সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, দুনিয়াতে জীবিত থাকা অবস্থায় পরকালের শাস্তি কামনা করা উচিত নয়। এভাবে দোয়া করা সুন্নাত পরিপন্থী কাজ। আবার সবর, মৃত্যু ও দোয়া কবুলে তাড়াহুড়ো করাও সুন্নাহ পরিপন্থী কাজ।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দোয়া করার ক্ষেত্রে উল্লেখিত বিষয়গুলো মেনে চলার তাওফিক দান করুন। হাদিসের পরিপন্থী দোয়া করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।