রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না মিয়ানমার!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২০শে জুন ২০১৯ ০২:৩১ অপরাহ্ন
রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না মিয়ানমার!

বার বার দ্বিপাক্ষিক আলোচনা, সমঝোতার চেষ্টা কিংবা আন্তর্জাতিক মহলের আহবানের পরও বিশ্বের সর্ববৃহৎ বাস্তুহারা জনগোষ্ঠীকে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে এতটুকু আগ্রহ দেখাচ্ছে না মিয়ানমার। এক্ষেত্রে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মানবিক কিংবা আর্থিক সাহায্যের প্রতি নির্ভরশীল না হয়ে রাজনৈতিক সমর্থন আদায়ে জোর প্রচেষ্টা চালোনোর পক্ষে মত বিশ্লেষকদের। পাশাপাশি, বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানের আইন প্রণয়েরও তাগিদ দিচ্ছেন তারা। এমন বাস্তবতায় বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব শরণার্থী দিবস। শেকড় উপড়ে নেয়া এই মানুষগুলোর চোখে সব হারানোর বেদনা। দেশের মাটি হারানো এমন ১২ লাখের বেশি মানুষের আশ্রয়স্থল বাংলাদেশ। বিশ্ব শরণার্থী দিবসটি তাই নানাভাবে বাংলাদেশের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

শুরুটা ১৯৭৮ সালে। সেই দফায় অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগ ফেরত গেলেও বিপত্তি শুরু হয় ১৯৯১ সালের পর থেকে। বার বার রোহিঙ্গাদের ঢল নামে সীমান্তে। সেই ঢল মাঝের এই সময়টায় খানিকটা বন্ধ থাকলেও ২০১৭ সালে দেখা দেয় বিপর্যয়। মানবিক বাংলাদেশের জন্য এখন প্রকট সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে বিরাট এই জনগোষ্ঠী। বিশ্লেষকদের মতে এই সংকট বাংলাদেশকে ছাপিয়ে পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে। অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির বলেন, 'সন্ত্রাসবাদের সম্ভাবনা থাকে সেটা শুধু বাংলাদেশে না পুরো অঞ্চলকে প্রভাব বিস্তার করবে।' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দা রোমানা রশীদ বলেন, 'বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়ে কোন ভুল করে নাই। কিন্তু এটা যে দিকে যাচ্ছে, সেটা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার দিকে যাচ্ছে।'

নানা ভাবে নানা দফায় চেষ্টা করা হলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে মিয়ানমারকে টলানো যায়নি। এক্ষেত্রে চাপ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি বিশ্ব সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক সমর্থন আদায়ে নতুনভাবে এগুনোর পরামর্শ তাদের। আসিফ মুনির বলেন, 'নিরাপত্তার দেয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিকভাবে যে সমাধান দরকার সে দিকে কেউ এগিয়ে আসতেছে না। অন্য কোন দেশে কিছু সংখ্যক স্থানান্তর করা যায় কি-না সেটাও দেখা দরকার।' রোহিঙ্গাদের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে যাওয়া, স্থানীয়দের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া কিংবা বাংলাদেশি পাসপোর্ট করার প্রচেষ্টা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের জন্য। এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করে নতুন জন্মগ্রহণ করা শিশুদের বিষয়েও আইন প্রণয়ন জরুরি বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। অধ্যাপক সৈয়দা রোমানা রশীদ বলেন, 'যে বাচ্চাটা আজ ক্যাম্পে জন্ম নিলে সে কি আরাকানের নাগরিক না বাংলাদেশে সে ব্যাপারেও কোন নির্দেশনা নেই। তাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সঠিকভাবে নিশ্চিত করারও সম্ভব নয়।' আশ্রিত রোহিঙ্গাদের যাতে কোনো ধরনের অপরাধে যুক্ত করা না হয়, সে ব্যাপারেও আরো কঠোর অবস্থানের তাগিদ রয়েছে।

ইনিউজ ৭১/এম.আর