প্রেমিককে নিয়ে শাশুড়িসহ তিনজনকে খুন করলেন প্রবাসীর স্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সোমবার ৯ই ডিসেম্বর ২০১৯ ১০:০১ অপরাহ্ন
প্রেমিককে নিয়ে শাশুড়িসহ তিনজনকে খুন করলেন প্রবাসীর স্ত্রী

বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর গ্রামে একই পরিবারের তিনজনকে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার কুয়েত প্রবাসীর স্ত্রী মিশরাত জাহান মিশুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বানারীপাড়া থানা পুলিশের ওসি শিশির কুমার পাল বরিশাল জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিশরাত জাহান মিশুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। আদালতের বিচারক মনিরুজ্জামান শুনানি শেষে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

শাশুড়ি, ননদ, জামাই ও স্বামীর খালাতো ভাইকে হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে রোববার রাতে মিশুকে গ্রেফতার করে বানারীপাড়া থানা পুলিশ। এছাড়া এর আগে তিনজন হত্যার ঘটনায় রাজমিস্ত্রি জাকির হোসেন ও তার সহযোগী জুয়েল হাওলাদারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ নিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করা হলো। রোববার জাকির হোসেন ও তার সহযোগী জুয়েল হাওলাদার হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তীমূলক জবানবন্দি দেন।

স্থানীয়রা জানান, কুয়েত প্রবাসী হাফেজ আব্দুর রবের স্ত্রী মিশরাত জাহান মিশুর সঙ্গে রাজমিস্ত্রি জাকির হোসেনের অনৈতিক সম্পর্কই হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ। বিষয়টি জেনে ফেলায় শাশুড়ি, ননদ জামাই ও স্বামীর খালাতো ভাইকে হত্যা করা হয়।

শনিবার সকালে বানারীপাড়ার সলিয়াবাকপুর এলাকার কুয়েত প্রবাসী হাফেজ আব্দুর রবের বাড়ি থেকে তার মা মরিয়ম বেগম (৭০), বোন মমতাজ বেগমের স্বামী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শফিকুল আলম (৬০) ও খালাতো ভাই মো. ইউসুফের (২২) মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় প্রবাসী রবের ভাই সুলতান মাহমুদ বাদী হয়ে রাজমিস্ত্রি জাকির হোসেন ও তার সহযোগী জুয়েল হাওলাদারকে আসামি করে শুক্রবার রাতে বানারীপাড়া থানায় মামলা করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বানারীপাড়া থানা পুলিশের ওসি শিশির কুমার পাল জানান, মামলার আসামি জাকির হোসেন ও তার সহযোগী জুয়েল হাওলাদারকে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে গৃহবধূ মিশুর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ায় রোববার রাতে মিশুকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া মিশুর দেবরের মেয়ে কলেজছাত্রী আছিয়া আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদে আছিয়া আক্তারের সম্পৃক্ততা প্রাথমিকভাবে না পাওয়ায় বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি শিশির কুমার পাল জানান, জিজ্ঞাসাবাদে গৃহবধূ মিশু পুলিশকে জানিয়েছে জাকির হোসেন, হাফেজ রবের বাড়িতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতো। এর পাশাপাশি কবিরাজি চিকিৎসা ও ঝাড়ফুক দেয়ার জন্য এ পরিবারের সঙ্গে জাকিরের সুসম্পর্ক হয়। এক পর্যায়ে জাকিরের সঙ্গে মিশুর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর থেকে ওই বাড়িতে তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। তাদের অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি জেনে যান প্রবাসী আব্দুর রবের মা মরিয়ম বেগম এবং খালাতো ভাই মো. ইউসুফ। এ কারণে তাদের হত্যার পরিকল্পনা করে জাকির ও মিশু।

ওসি শিশির কুমার পাল জানান, ঘটনার রাতে মিশুর লিভারজনিত সমস্যার চিকিৎসা দেয়ার কথা বলেছিল জাকির। রাতে জ্বিন-পরী এসে চিকিৎসা দেবে এমন কথা বলে মিশুকে ঘরের দরজা খোলা রাখতে বলা হয়। মিশু পেছনের দরজা খোলা রেখে ঘুমায়।

শুক্রবার দিনগত গভীর রাতে জাকির ও তার সহযোগী জুয়েল ঘরে ঢুকে প্রথমে ইউসুফের পা বেঁধে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে তারা পাশের কক্ষে ঘুমিয়ে থাকা মরিয়ম বেগমকেও একইভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এ সময় পাশের কক্ষে ঘুমিয়ে থাকা প্রবাসীর ভগ্নিপতি শফিকুল আলম ঘুমের মধ্যে কাঁশি দেন। শফিকুল ওই দুইজনকে হত্যার বিষয়টি টের পেতে পারে সন্দেহে তাকেও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

এরপর জা‌কির মোবাইল ফো‌নে মিশুর স‌ঙ্গে অশ্লীল ছ‌বি তু‌লে। বিশ্বাস ঘাতকতা কর‌লে তা ইন্টার‌নে‌টে ছ‌ড়িয়ে দেয়ার হুম‌কি দেয় সে। এরপর রাতেই মিশু জাকিরের বিকাশ নম্বরে ৫ হাজার টাকা পাঠায়।

ওসি শিশির কুমার পাল আরও জানান, রোববার রাতে জাকির ও জুয়েল আদালতে স্বীকারোক্তীমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করতে গৃহবধূ মিশুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব