মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সাহিত্যিক, রাজনৈতিক ও সংস্কৃতি কর্মীদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন, সংগ্রাম করেছেন সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে। সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি নারীমুক্তি, মানবমুক্তি এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন, অংশ নিয়েছেন প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলনে। জননী সাহসিকা, বাংলাদেশে নারী মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব কবি সুফিয়া কামালের ১০৮তম জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ ডুডল বানিয়েছে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগল। ১৯ জুন, বুধবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে গুগলের বাংলাদেশের ডোমেইন হোম পেজে কবি সুফিয়া কামালকে দেখা যাচ্ছে। গুগল তাদের ডুডল পেজে লিখেছে, কবি বেগম সুফিয়া কামালের ১০৮তম জন্মবার্ষিকী আজ।
বিভিন্ন দিবস, ব্যক্তি ও ঘটনার স্মরণে গুগল তাদের হোম পেজে নিজেদের লোগো বদলে বিশেষ দিনটির সঙ্গে মানানসই নকশার যে লোগো তৈরি করে গুগল, তাই ডুডল। এর আগে বাংলাদেশের বিভিন্ন দিবস ও ব্যক্তির স্মরণে এ ধরনের ডুডল প্রকাশ করেছে গুগল। কবি সুফিয়া কামালের জন্মদিনেও কবিকে স্মরণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কবি সুফিয়া কামাল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার একজন সমাজসেবী ও নারীনেত্রী। ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদের নবাব পরিবারে তার জন্ম। যে সময়ে সুফিয়া কামালের জন্ম তখন বাঙালি মুসলিম নারীদের গৃহবন্দী জীবন কাটাতে হত। স্কুল-কলেজে পড়ার কোনো সুযোগ তাদের ছিলো না। তার পরিবারে উর্দু, আরবি, ফার্সি চর্চা ছাড়া বাংলা ভাষার প্রবেশ একরকম নিষিদ্ধ ছিল। সেই বিরুদ্ধ পরিবেশে সুফিয়া কামাল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ পাননি। তিনি পারিবারিক নানা উত্থানপতনের মধ্যে স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হন।
১৯২৪ সনে মাত্র ১৩ বছর বয়সে মামাতো ভাই সৈয়দ নেহাল হোসেনের সাথে সুফিয়ার বিয়ে দেওয়া হয়। নেহাল অপেক্ষাকৃত আধুনিকমনস্ক ছিলেন, তিনি সুফিয়া কামালকে সমাজসেবা ও সাহিত্যচর্চায় উৎসাহিত করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সাহিত্যিক, রাজনৈতিক ও সংস্কৃতি কর্মীদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন, সংগ্রাম করেছেন সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে। সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি নারীমুক্তি, মানবমুক্তি এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন, অংশ নিয়েছেন প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলনে। তিনি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ছায়ানট, কচিকাঁচার মেলার প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী ছিলেন। দেশবিভাগের পূর্বে তিনি নারীমুক্তি আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার সাপ্তাহিক বেগম এর প্রথম সম্পাদকও ছিলেন তিনি। সাঁঝের মায়া, মন ও জীবন, শান্তি ও প্রার্থনা, উদাত্ত পৃথিবী ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। এ ছাড়া সোভিয়েতের দিনগুলি এবং একাত্তরের ডায়েরি তার অন্যতম ভ্রমণ ও স্মৃতিগ্রন্থ। ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকায় মহান এ কবির জীবনাবসান ঘটে।
এদিকে, মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কবি সুফিয়া কামালের জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সংগঠনটি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। ২০ জুন, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে ‘সুফিয়া কামাল ও সমাজ বিকাশের আন্দোলন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা প্রদান করবেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক কাজী মদিনা। এ ছাড়া চলতি বছর ‘কবি সুফিয়া কামাল সম্মাননা’ প্রদান করা হবে— একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরকে। কবির জন্মদিন উপলক্ষে ২১ জুন, শুক্রবার সকালে ‘কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা’র উদ্যোগে সেগুনবাগিচা মেলা প্রাঙ্গণে আনন্দানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, সম্মানিত অতিথিদের মধ্য থেকে কবির স্মৃতিচারণ করবেন কবিকন্যা মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।