বাংলাদেশ সুশাসনের বিষয়টিতে কীভাবে উন্নতি করবে তা জানতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে সদ্য সমাপ্ত একাদশ সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চেয়েছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্র সফররত পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ডেভিড হ্যালে ও ইউএসএইড প্রধান মার্ক গ্রিনের বৈঠকে এসব বিষয়ে জানার আগ্রহ দেখানো হয়। ওয়াশিংটনে মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশে নতুন সরকার গঠনের পর যুক্তরাষ্ট্রে পররাষ্ট্র সচিবের এটি প্রথম সফর। তার এ সফরের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার নতুন মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর বিদ্যমান সম্পর্ক আরও পোক্ত করা।
সফরের অংশ হিসেবে সচিব মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রিন্সিপ্যাল ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এলিস ওয়েলস; গণতন্ত্র, অধিকার ও শ্রম বিষয়ক ডিপার্টমেন্টের প্রধান রাষ্ট্রদূত মাইকেল কোজাক; ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ক্যারোল থমসন ও’কনেল; অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ জন কটন রিজমন্ড এবং অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ নাথান সেলসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সফরে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করার বার্তা দিয়েছে বাংলাদেশ। এই বার্তাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে মার্কিন প্রশাসন।
সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত ফলপ্রসু আলোচনা করেছি এবং ভবিষ্যতে কীভাবে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাবো সে বিষয়ে কথা বলেছি।’ এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘রাজনীতি ও সুশাসনের বিষয়টি নিয়ে বৈঠকগুলিতে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশে যে নির্বাচন হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সে বিষয়ে জানতে চেয়েছে।’ সুশাসনের বিষয়ে ঢাকা ও ওয়াশিংটন একমত এবং এ বিষয়ে উভয়পক্ষ একসঙ্গে কাজ করতে চায় বলেও জানান তিনি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকগুলিতে পররাষ্ট্র সচিব নতুন গঠিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কেবিনেটের অগ্রাধিকার- সুশাসন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান বিষয়ে জানান। এছাড়া তিনি আরও বলেন, ‘মার্কিন প্রশাসন আমাদের আশ্বস্ত করেছে যে, আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর হবে এবং সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়বে। বাণিজ্য, জ্বালানি, রাজনীতি, রোহিঙ্গা, অভিবাসন এবং অন্য বিষয় নিয়েও দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।’ যুক্তরাষ্ট্রকে অন্যতম বাণিজ্যিক অংশীদার উল্লেখ করে সচিব বলেন, ‘আমরা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছি এবং মার্কিন বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগ করে সুবিধা নিতে পারেন।’ উল্লেখ্য, গত অর্থ বছরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ছিল ৬.৬৮ বিলিয়ন ডলারের। এর মধ্যে বাংলাদেশের রফতানি ছিল প্রায় ৫ বিলিয়ন। বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। যুক্তরাষ্ট্রের মোট বাণিজ্যের ০.২৩ শতাংশ হয় বাংলাদেশের সঙ্গে। কিন্তু দেশটির মোট শুল্ক আয়ের ২.৫৪ শতাংশ আসে বাংলাদেশি পণ্য থেকে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমার সঙ্গে হোয়াইট হাউজ এবং পেন্টাগনের কর্মকর্তাদের বৈঠকের কথা আছে। এছাড়া, মার্কিন থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক হেরিটেজ ফাউন্ডেশনে বৈশ্বিক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হবে।’ দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুটিও গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উত্তর রাখাইনের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির কারণে ভয়াবহ এ সমস্যা সৃষ্টি এবং দিন দিন তা আরও জটিল আকার ধারণ করছে বলে জানানো হয়। সমস্যার সমাধানে মিয়ানমার সরকারকে দায়িত্ব নিয়ে সেখানকার সঠিক পরিবেশ ঠিক করতে হবে। এর জন্য দেশটিকে চাপ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
উত্তরে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে বাংলাদেশকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এছাড়া দুর্নীতি রোধ, সন্ত্রাসবাদ দমন এবং মানবপাচার রোধে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্র সন্তোষ প্রকাশ করে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ জিয়াউদ্দিন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।