প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৫, ১৫:৫৮
রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রিমান্ড শুনানিতে উপস্থিত হয়ে মন্তব্য করেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই কখনো সুষ্ঠু হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবে না, যদি না মৌলিক রাজনৈতিক সংস্কার করা হয়। দুপুর দেড়টায় চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের শুনানির পর আদালতের কাছে বক্তব্য রাখতে গিয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানও ক্ষমতার মোহ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি, তার আমলেও নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।
তিনি আদালতকে আরও বলেন, ১৯৭৩ সালের নির্বাচনেও মানুষকে রাস্তায় আটকে মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। কোনো দলীয় সরকারের অধীনে এখন পর্যন্ত কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। বরং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো তুলনামূলকভাবে গ্রহণযোগ্য ছিল। সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার আদালতকে বলেন, এক হাজার বছরেও বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, যদি না নির্বাচন ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে মৌলিক পরিবর্তন আনা যায়।
শুনানি শেষে আদালত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়ালের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে গত ২৩ জুন সাবেক সিইসি নুরুল হুদার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। হাবিবুল আউয়ালকে বুধবার রাজধানীর মগবাজার থেকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ।
গত ২২ জুন বিএনপির পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের বদলে নির্বাচন কমিশন সরকারপন্থী আচরণ করেছে এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে। পরে ২৫ জুন মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ সংযুক্ত করা হয়। মামলায় সাবেক তিন নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও পাঁচজন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শককে আসামি করা হয়েছে।
এই মামলায় রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে যে ধরনের মন্তব্য ও স্বীকারোক্তি উঠে এসেছে, তা রাজনৈতিক পরিসরে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, হাবিবুল আউয়ালের বক্তব্য দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বাস্তবতা ও নির্বাচন কমিশনের সীমাবদ্ধতাকেই উন্মোচন করেছে।