প্রকাশ: ৫ জুন ২০২৫, ১১:৪২
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বৃহস্পতিবার (৫ জুন) একটি পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে, যেখানে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে ফের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে রেখেছে। ৫০ পাতার এই রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। রায়ে সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্ট বিভাগের পূর্বের রায় বাতিল করে দিয়েছে, যেখানে বিচারপতি অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে দেওয়া হয়েছিল। সেই রায়ে বিশেষ করে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সম্পর্কে কটূক্তির অভিযোগ এনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে উল্লেখ ছিল। এ রায় বাতিলের মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের বিষয়টি আবার সংবিধানে পূর্বের মতো করে ফেরানো হয়েছে।
২০১৬ সালের মে মাসে হাইকোর্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছিল। এই সংশোধনীতে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছিল, যা পরে সরকার আপিল করেছিল। আপিল বিভাগ প্রথমে সেই আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ১ আগস্ট প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে আপিল বিভাগ স্পষ্ট করেছে যে, বিচারপতিদের অপসারণের বিষয়টি অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে হবে এবং এ বিধান সংবিধানে পুনর্বহাল করা হয়েছে।
এর আগে ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর সরকার ৯০৮ পৃষ্ঠার একটি রিভিউ পিটিশন দাখিল করে আপিল বিভাগের কাছে। এতে তারা ষোড়শ সংশোধনী পুনর্বহাল ও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান বাতিল করার কারণসমূহ উপস্থাপন করে। তবে সর্বোচ্চ আদালত এই আবেদন নাকচ করে দেয়। ফলে বিচারপতি অপসারণের ক্ষেত্রে সরকারের সংসদীয় নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কমে গিয়েছে এবং বিচার বিভাগের স্বায়ত্তশাসনের ওপর জোর দিয়েছে।
সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে বিচারপতি অপসারণের একমাত্র কর্তৃপক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও সুশাসন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এর ফলে বিচারপতিদের স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতা বজায় থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই রায় দেশের বিচার ব্যবস্থায় একটি বড় পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং স্বাধীন বিচারব্যবস্থার ভিত্তি মজবুত করবে। নিয়ম-নীতি মেনে বিচারিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় এটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে আইন বিশ্লেষকরা মনে করছেন।