ডাসারে আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে কালভার্টের মুখ ভরাটের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
মোঃ আতিকুর রহমান আজাদ,উপজেলা প্রতিনিধি কালকিনি (মাদারীপুর)
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ১০ই নভেম্বর ২০২২ ০৬:২৩ অপরাহ্ন
ডাসারে আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে কালভার্টের মুখ ভরাটের অভিযোগ

মাদারীপুরের ডাসারে বালু দিয়ে সরকারী জায়গা ও কালভার্টের মুখ ভরাট করার অভিযোগ উঠেছে সৈয়দ আবুল বাশার নামে এক আওয়ামীলীগ নেতার বিরুদ্ধে। সে জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি । জমি ভরাট ও কালভার্টের মুখ ভরাটে পানি প্রবাহ ও কৃষি উৎপাদন মারাত্ত্বকভাবে ব্যহত হবে বলে ধারনা করছে স্থানীয়রা।


পাশাপাশি কয়েক একর জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে কালভার্টটির মুখ আটকে রাখা হলে। সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানায় স্থানীয় প্রশাসন।   

 

স্থানীয়রা জানায়, মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার কাজী বাকাই ইউনিয়নের খান্দলী বাঁশতলা চৌরাস্তা  মোড়ে নিজের মালিকানা জায়গা ভরাট করার সাথে সাথে সড়ক ও  সওজের সরকারী জায়গা ও পানি প্রবাহের জন্য তৈরী করা কালভার্টের মুখ (পূর্ব পাশ) বালু দিয়ে ভরাটের অভিযোগ উঠেছে মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি সৈয়দ আবুল বাশারের বিরুদ্ধে। 


চলতি সপ্তাহে তার বালু ভরাটের বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ও প্রশাসনের মধ্যে চলছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিনত হয়েছে বিষয়টি। গত কয়েক বছর আগে পাথুরিয়া পার হইতে ডাসার পর্যন্ত সড়ক ও জনপথ রাস্তাটি তৈরি করে কিন্তু নিম্নাঞ্চল হওয়ায় এলাকাটি সামান্য বৃষ্টি হলেই প্রতি বছর বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে হাজার হাজার একর কৃষি জমি প্লাবিত হয় ফলে আশপাশের বাড়িঘর তলিয়ে যেতে থাকে এবং পানির চাপে রাস্তায় ফাটলের সৃষ্টি হয় বিধায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ মাদারীপুর বাশতলা মোড় সংলগ্ন একটি কার্লভাট নির্মান করে এতে করায় জনগণের দুঃখ দুর্দশা লাঘব হয়।


 কিন্তু সে কালভার্টটির মুখ ভরাট করায় সেই পুরনো দূর্ভোগের দিন আবার শুরু হবে।  কয়েকটি গ্রাম ও কয়েকশ একর জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারেও বলে জানায় স্থানীয়রা। জমি ভরাটকরী জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। 


এক সময়ে আর্থিক সংকটে থাকলেও আওয়ামী লীগের আমলে প্রচুর অর্থের মালিক হয়ে যান এ নেতা। সরকারী জমিই শুধু নয় মাদারীপুর শহরে তার নিজ ক্রয়কৃত সম্পত্তি যতটুকু তার চেয়ে বেশি জমি দখল করে স্থাপনা করার কথাও জানা যায়। কালভার্টের মুখ বন্ধ করলেও পানি চলাচলের জন্য ৫ ইঞ্চি প্লাস্টিকের পাইপ দেয়া হয়েছে বলে জানান ঐ আওয়ামী লীগ নেতা। 


এছাড়া সব অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। তবে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা জানায় তাকে নিষেধ করার পরেও রাতের আধারে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাট করা হয়। উপজেলা প্রশাসন বলছে জন দূর্ভোগ এড়াতে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।


স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা  জানান, সে সব সময়ই ক্ষমতা দেখায়। রাজনীতি করলে জনগণের কথাও ভাবতে হয়। সরকারি জমি ভরাট করার অধিকার তার নেই। মাদারীপুরের শকুনি এলাকায় তার যতটুকু জমি আছে তার চেয়ে বেশি জমি দখল করে স্থাপনার করেছে। যাদের জায়গা দখল করেছে তারা নিরহ বলে মুখ খুলতে সাহস পায়নি  বলেও শুনেছি। এখনো সময় আছে সমস্যাগুলো সমাধানের।


রাজিব হোসেন নামে একজন বলেন, টাকা সম্পদ মানুষের কত লাগে। এক সময় কিছু ই ছিল না। এখন অনেক হইছে। তার পরও সরকারি জমি আর কালভার্ট দখল করার কোন প্রয়োজন আছে নাকি?  প্রশাসন কয়েক দিন পরে থেমে যাবে, দেখেও না দেখার ভান করবে। আস্তে আস্তে সরকারী জমি ও খাল সব ভরাট হয়ে যাবে যদি এখন ব্যবস্থা না নেয়া হয়। 


আ. খালেক নামে একজন বলেন, সরকারি জমিসহ অবৈধ ড্রেজার দিয়ে জায়গা ভরাট করা হলো। সরকারি প্রকল্পের কালভার্টের মুখ আটকে দিল কেউ দেখলো না? কেউ কি দেখার নাই। যখন কৃষি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে পানির অভাবে তখন কৃষক বুঝবে। তাদের তো কোন ক্ষতি হবে না হবে গরিবের। প্রশাসন নেতার নাকি জনগণের তা এবার প্রমান হবে। 


কাজী বাকাই ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য মিসেস রানু বেগম বলেন, অবৈধভাবে একজন সুবিধা ভোগ করে শত শত মানুষের অসুবিধা হবে সেটা মেনে নেয়া যায় না, কৃষকের কথা চিন্তা করে দ্রুত কার্লভাটের মুখ খুলে দেয়ার দাবী জানান তিনি।


কাজীবাকাই ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা, মোঃ গোলাম মাওলা জানান, সড়ক ও জনপথের জমি ও কার্লভাটের মুখ বন্ধ না করার জন্য আমরা সৈয়দ আবুল বাশারকে মৌখিক ভাবে নিষেধ করলে রাতের অন্ধকারে তিনি এসব কাজ করেছেন, যেহেতু সড়ক ও জনপথের জামি তাই এই বিষয়ে তারাই প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিবেন তবে কার্লভাটের মুখ বন্ধ করা ও অবৈধভাবে সরকারি সম্পতি ভরাট করার এখতিয়ার কারো নেই।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দ আবুল বাশার বলেন,আমার জমি আমি ভরাট করছি।আশপাশের অনেকেই তো সরকারি জমি ভরাট করেছে। পানির প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। কিছু দিন পরে সব ভরাট হয়ে যাবে। যারা আমাকে গোপন শত্রু তারা বিষয়টি নিয়ে মেতেছে। প্রশাসন দেখুক আমি সরকারী জমি ভরাট করছি কিনা। তাদের জমি থাকলে ছেড়ে দিব। বিগত দিনে জেলার বিভিন্ন স্থানে এমন ঘটনা ঘটেছে তাই তাদের অনুসরণ করে আমিও কার্লভাটের মুখ বন্ধ করে দিয়েছি তাতে দোষের কিছু নেই যেহেতু এখানে আমার জমি রয়েছে।


ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন ইয়াসমিন বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে তাকে বলা হয়েছে সরকারী জমি ছেড়ে দিতে ও কালভার্টের মুখ খুলে দেয়ার জন্য। জন দূর্ভোগ কমাতে আমরা সচেষ্ট থাকবো। তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।