বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ সম্প্রতি এক ফেসবুক পোস্টে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে তার মতামত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, যেসব নেতা আন্দোলনের ডাক দিয়ে মাঠে নেমে পরে সরে গিয়েছিলেন, তারা এখন আওয়ামী পুনর্বাসন চাচ্ছেন এবং ভারতনির্ভর কূটনীতি দিয়ে রাজনীতির আঁতাত তৈরি করছেন। তার এই মন্তব্য রাজনীতির অঙ্গনে নতুন আলোচনার সৃষ্টি করেছে।
হাসনাত আব্দুল্লাহ তার পোস্টে আরও বলেন, "দীর্ঘ দেড় যুগেরও বেশি সময়ের মধ্যে কার সঙ্গে কে ব্যবসা করেছে, আর গ্রেপ্তারের পর কে কার জন্য তদবির করেছে, সে সম্পর্কেও আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে।" এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যেখানে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির অন্দরের অজানা অনেক তথ্য তুলে ধরছেন।
এদিন, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বিএনপির প্রতি তার বক্তব্যে বলেছেন, বিএনপি মহাসচিবের নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আসলে ১/১১ এর মতো আরেকটি সরকার গঠনের পরিকল্পনা করছে। নাহিদ ইসলামের মতে, ১/১১ এর পর থেকে আওয়ামী ফ্যাসিজমের উত্থান হয়েছে এবং বিএনপির এই দাবি সেই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার মতে, বিএনপির এই দাবির ফলে গুম-খুন ও হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া এবং সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।
হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও বলেন, "ছাত্ররা ৩ আগস্ট থেকে দাবি জানিয়ে আসছে, তারা কোনো প্রকার সেনাশাসন বা জরুরি অবস্থা মেনে নেবে না।" তিনি জানান, যখন ছাত্ররা রাজপথে ছিল এবং পুলিশের গুলি অব্যাহত ছিল, তখন অনেক জাতীয় নেতা ক্যান্টনমেন্টে বসে নতুন সরকারের পরিকল্পনা করছিলেন। তিনি বলেন, ছাত্ররা বারবার ক্যান্টনমেন্টে যেতে অস্বীকার করেছে এবং পরে বঙ্গভবনে আলোচনা ও আলোচনা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
ছাত্রদের আন্দোলন এবং তাদের ঐক্যের উপর গুরুত্ব দিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, "এ সরকারের একমাত্র বৈশিষ্ট্য হলো ছাত্রদের নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাদের দাবির প্রতি সম্মান।" তিনি জানান, ছাত্ররা দেশের জনগণের একমাত্র শক্তি, যা ১/১১ থেকে শুরু করে বর্তমান সরকারের বিরোধিতা পর্যন্ত তাদের অভ্যুত্থানবিরোধী অবস্থানে দৃঢ়ভাবে অবস্থান করেছে।
এছাড়া তিনি আরও বলেন, "বিএনপির পক্ষ থেকে ১/১১ সরকারের পুনঃগঠনের প্রস্তাবনা জনগণের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হবে। ছাত্ররা কখনো এই ধরনের পরিকল্পনা মেনে নেবে না এবং এর বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।"
হাসনাত আব্দুল্লাহ'র মতে, ছাত্ররা কোনো ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দল নয়, বরং তারা দেশের বৃহত্তর স্বার্থ এবং জাতীয় ঐক্যকে সমর্থন করে। তিনি বলেন, "সরকারের গঠনে ছাত্ররা অংশগ্রহণ করলেও তাদের কোনো দলীয় দাবি ছিল না, বরং তারা দেশের স্থিতিশীলতা এবং জাতীয় ঐক্য রক্ষার জন্য সব সময় তাদের অবস্থান থেকে সরে এসেছে।"
তিনি এই পরিস্থিতিতে ছাত্রদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, "বিএনপি যদি কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে তাদের উচিত ছাত্রদের সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা এবং গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হওয়া।"
এমন পরিস্থিতিতে হাসনাত আব্দুল্লাহ'র মন্তব্যের পর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তার বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। বিশেষ করে তার যে মন্তব্য "বাংলাদেশকে দুর্বল করা সহজ, কারণ বাংলাদেশকে সহজেই বিভাজিত করা যায়" তা দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ওপর গভীর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
এই বক্তব্যের পর বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দও নানা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এবং সরকারের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তবে হাসনাত আব্দুল্লাহ'র কথায় রাজনীতির এই নতুন দিকটি নিয়ে জনমনে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। তিনি ছাত্রদের উদ্দেশে বলেন, "যে কোনো আন্দোলন কিংবা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে ছাত্ররা তাতে অংশ নেবে না এবং দেশপ্রেমিক ও ত্যাগী নেতৃত্বকে ছাত্রদের সঙ্গে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করার আহ্বান জানাচ্ছি।"
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।