উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা শহর নওগাঁ। প্রতিদিন সকাল শুরু হয় শহরবাসীর যাটজটের মধ্য দিয়ে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তীব্র যানজটে নাকাল শহরবাসী ও পথচারীরা। এযেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে শহরবাসীর। স্থানীয়দের অভিযোগ, অব্যবস্থাপনার কারনে শহরের প্রাণকেন্দ্রেই যানজট এখন নিত্যসঙ্গী। দিন দিন লম্বা হচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোজট। এ ছাড়া সড়কে বড় যানবাহন রেখে মালামাল খালাস অন্যতম কারণ। এর ফলে পথচারীদের পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে। ভোগান্তির শিকার হচ্ছে জরুরি সেবার গাড়িগুলোও।
নওগাঁ পৌরসভার তথ্যমতে, নওগাঁ শহরের মোট আয়তন ৩৮ দশমিক ৪২ বর্গকিলোমিটার। ২০১০ সাল থেকে শহরে চলাচলে ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া শুরু করে পৌরসভা। ২০১৬ সালের পর থেকে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রেখেছে। ছোট এই শহরে পৌরসভার লাইসেন্সধারী ইজিবাইক রয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার। এর বাইরে লাইসেন্সবিহীন ইজিবাইক আছে আরো প্রায় ১০ হাজারের মত। সিএনজি, রিক্সা,ভ্যান, মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাসসহ ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে আরও প্রায় দশ হাজার। অন্যদিকে পৌর কৃর্তপক্ষ ও সড়ক বিভাগ বলছে, যানজট নিরসনে চারলেনের রাস্তা নির্মানসহ নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নওগাঁ শহরের মেইন রোডের কাঁঠালতলী থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বাসস্ট্যান্ড, তাজের মোড়, ব্রীজের বাটার মোড়, সরিষাহাটির মোড়, মুক্তির মোড়, কাজীর মোড়, রুবির মোড়, দয়ালের মোড় হয়ে বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ৪কিলোমিটার পর্যন্ত তীব্র যানজট লেগে থাকে। এছাড়া শহরের মধ্যে রাস্তার দুই পাশে স্থায়ী দোকান থাকার পর দোকানের সামনে ফুটপাত দখল করে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীরা তাদের দোকান পরিচালনা করেন। স্থায়ী দোকানীরা তাদের দোকানের সামনের জায়গা দখল করে মালামাল রাখে। এতে করে রাস্তায় ভ্যান, রিকশা, সাইকেল, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ও ছোট যান চলাচল করায় পথচারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। রাস্তার দুই পাশ দোকানীদের দখলে থাকায় পথচারীরা রাস্তার দুই পাশ দিয়ে যেতে পারেননা ঠিকমত।
বাবু প্রামাণিক নামের পথচারী বলেন, শহর অনেক ছোট কিন্তু তীব্র যানজটে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। রাস্তার পাশে দিয়ে হেটে যাওয়ার মত অবস্থা নাই। দিন দিন যানজট বেড়েই চলেছে।
আশরাফুল ইসলাম নামের স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, গত প্রায় ৮-১০বছর থেকে শহরে যানজট বৃদ্ধি পেয়েছে। শহরের আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে শহর পরিকল্পনা ব্যবস্থা উন্নত করা না গেলে সামনে যানজট আরও ভয়াবহ রুপ ধারণ করবে। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮পর্যন্ত শহরের ভিতরে কোন ভাড়ি যানবাহন চলাচলের নিয়ম নাই। কিন্তু অনেক সময় ভারি যাববাহন চলাচল করতে দেখা যায়। সার্বিকভাবে পৌর কৃর্তপক্ষ ও প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো দরকার।
শহরের কাপড়পট্টির মিজানুর রহমান ও অখিল চন্দ্র নামের দুই ব্যবসায়ী বলেন, মটরসাইলকেল ভ্যান, ইজিবাইক ও অটোরিকশাগুলো যেখানে -সেখানে দাঁড় করিয়ে রাখে। অনেক সময় আমাদের দোকানগুলোর সামনেও দাঁড় করায়। এগুলোর কারনেও যানজট বেড়ে যায়। এত যানবাহনের চাপ, সে তুলনায় রাস্তা ছোট। আর শহরে কোন গোল চত্বরও নেই।
মিরাজুল হক ও খালেক দেওয়ান নামের দুইজন চালকের সাথে কথা হলে তারা জানান, নওগাঁ শহরে ইজিবাইকের কোনো বৈধ স্ট্যান্ড নেই। তাহলে আমরা কোথায় দাঁড় করাবো। যার কারনে অস্থায়ী ভাবে শহরের বেশ কয়েকটি মোড় থেকে আমরা যাত্রী উঠা-নামানো করে থাকি। এছাড়্া অনেক অবৈধ ইজিবাইক চলাচল করছে শহরের ভিতরে। সেগুলোকে কৃর্তপক্ষের নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
ট্রাফিক ইন্সপেক্টর বিকর্ণ কুমার চৌধুরী বলেন, শহরের মেইন রাস্তা ছোট কিন্তু অতিরিক্ত যানবাহন ও অব্যবস্থাপনার কারনে শহরে যানজট লেগেই থাকে। ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা সাধ্যমত সড়কে আমাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।
নওগাঁ পৌরসভার মেয়র নজমুল হক বলেন, শহরে চলাচলকারী অবৈধ ইজিবাইক ও অটোরিকশা নিয়ন্ত্রনে প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগিতায় একাধিক অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু ইজিবাইক ও অটোরিকশার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলেই তারা আন্দোলনে নেমে যায়। এসময় নিয়ন্ত্রনে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আর চার লেনের রাস্তা করার পরিকল্পনা হচ্ছে। সেটি বাস্তবায়ন হলে যানজট সমস্যা অনেকটাই নিরসন হবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাজেদুর রহমান বলেন, নওগাঁ শহরের যানজট নিরসনে চার লেনের সড়ক তৈরির প্রকল্পের উদ্যোগ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ কমবে যাবে। চার লেনের ১৬ কিলোমিটার এই রাস্তা শুরু হবে শহরের ঢাকা মোড় থেকে শুরু শহরের ব্রিটিশ আমলে তৈরি লিটন ব্রিজ হয়ে নওগাঁ-রাজশাহী সড়কের চৌমাশিয়া পর্যন্ত গিয়ে শেষ হবে।
তিনি আরো বলেন, এই মেগা প্রকল্পে থাকবে চারটি ফুটওভার ব্রিজ, ১০টি মিনি বাসস্টপ, ১৪টি কালভার্ট, ফুটপাত ও উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ আধুনিক সব সড়ক কাঠামো ব্যবস্থা। বর্তমান যে রাস্তা আছে তা প্রশস্ত করে ৮০ ফুট করা হবে। সাচাই বাছাই প্রক্রিয়া চলছে। একনেক সভায় এই প্রকল্প অনুমোদন পেলেই বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।