রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় পদ্মায় আরো ৩ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৭৭সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের অধিকাংশ রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে এছাড়াও দেবগ্রাম ইউনিয়ন ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের বেশির ভাগ অংশ নদী তীরবর্তী হবার কারনে অনেক পরিবারের ঘরে পানি উঠেছে।
রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন উপজেলার চার ইউনিয়নের মধ্যে দেবগ্রাম ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের পদ্মার তীরবর্তী অধিকাংশ এলাকা ঘুরে দেখা যায় পদ্মার পানিতে তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে, বাড়ির উঠানে ও রাস্তায় হাঁটুসমান পানি জমেছে।আবার অনেকেই কোমরপানি ভেঙে চলাচল করছে। আবার কেউ কেউ প্রয়োজনের তাগিদে হাটবাজারে ছুটছে।
দেবগ্রামের,মুন্সীপাড়া ঘুরে, আতর আলী চেয়ারম্যান বাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এই সব এলাকার চারদিকে শুধু পানি। অনেকের বাড়ির উঠানে পানি তা লক্ষ্য করা গেছে। কারও কারও ঘরের ভেতরে পানি উঠে গেছে। ঘরে পানি প্রবেশ করায় কেউ কেউ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। অনেকেই গবাদিপশুর রাস্তার উপরে রেখেছে।সেখানেই মানুষ ও গবাদিপশুর খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবার কেউ রান্নার কাজে ব্যস্ত আছে।
দেবগ্রামের মুন্সীপাড়ার জবেদা খাতুন ও ইসলাম শেখের বাড়ির ভেতরে কোমরসমান পানি। তাঁরা বলেন, ‘প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ঘরের ভেতর পানি ওঠায় পরিবারের দুই ছেলে, বউ ও নাতিদের অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। বাড়ির ভেতর পানি। চারপাশে পানি। অথচ এখন পর্যন্ত আমাদের কেউ খোঁজ নেয়নি। কীভাবে যে চলছি, কেউ খোঁজ নিচ্ছে না। আমরা এখন অন্যের বাড়িতে উঠেছি।’
দেবগ্রামের মুন্সীপাড়ার মোসলেম সরদার ও সোলেমান সরদারের বাড়ির ভেতরে হাটু পানি। তাঁরা বলেন, ‘প্রায় ১৫ দিন ধরে ঘরের সামনে পানি ওঠায় পরিবারের ছেলে, মেয়ে, মা নিয়ে বিপাকে পরেছেন। বাড়ির ভেতর পানি। চারপাশে পানি। অথচ এখন পর্যন্ত আমাদের কেউ খোঁজ নেয়নি। কীভাবে যে চলছি, কেউ খোঁজ নিচ্ছে না।
একই গ্রামের বাসিন্দা লোকমান শেখ বলেন, আমাদের কষ্টের কোন সীমা নেই, একে নদী ভাঙন অন্যদিকে এই পানি এই সব মিলিয়ে এ এক বড় অশান্তির ভিতরে আছি। প্রতিদিন এ হাঁটুপানি ভেঙে আমাদের যাওয়া আসা করা লাগছে। এই পানির কারনে আমাদের কষ্টের সাথে আমাদের গবাদিপশুরও কষ্ট হচ্ছে তাদেরও খাবার ব্যবস্থা করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।
দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, দেবগ্রামে ইউনিয়নের দেবগ্রাম, মুন্সিবাজার, কাওয়ালজানি, বেতকা, রাখালগাছী ও উত্তর চর পাচুরিয়া এলাকার কমপক্ষে দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ইউনিয়ন পরিষদে থেকে কিছুদিন আগে ৬০০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছিল। নতুন করে চাহিদা দেওয়া হয়েছে। আমরা বরাদ্দ পেলেই এসব পরিবারকে দেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজিজুল হক বলেন, আমরা বন্যাকবলিত মানুষের তালিকা তৈরি করছি। বন্যাদুর্গত মানুষের সাহায্যের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে ত্রাণ সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা প্রায় ২০ মেট্রিক টন চাল বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।