প্রকাশ: ২ জুলাই ২০২৫, ১৭:৫৯
গণমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ও ভুয়া সংবাদের বিস্তার ঠেকাতে জাতিসংঘকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার (২ জুলাই) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইউনেস্কোর উচ্চপর্যায়ের দুই কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকে এ আহ্বান জানান তিনি। ইউনেস্কোর হেড অব অফিস সুসান ভিজ ও ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন অ্যান্ড সেফটি অব জার্নালিস্টস সেকশনের জ্যেষ্ঠ প্রকল্প কর্মকর্তা মেহেদী বেনচেলাহ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ইউএনডিপি ও ইউনেস্কোর যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিতব্য ‘অ্যান অ্যাসেসমেন্ট অব বাংলাদেশস মিডিয়া ল্যান্ডস্কেপ’ প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, বহুমাত্রিকতা এবং কার্যকারিতার ওপর আলোকপাত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সাক্ষাতে ড. ইউনূস বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর একটি হলো মিথ্যা তথ্য এবং অপপ্রচার, যা প্রায়ই দেশের বাইরের কিছু মহল ও তাদের দেশীয় সহযোগীদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, এই মিথ্যা তথ্য এক ধরনের ‘বোমাবাজি’, যা সমাজ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ডিজিটাল মাধ্যমের পাশাপাশি প্রচলিত গণমাধ্যমেও এ ধরনের তথ্য ছড়ানো হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, মিডিয়া ও সরকারের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলতে জাতিসংঘকে আরও সক্রিয় হতে হবে এবং একটি স্বাধীন, দায়িত্বশীল নীতিমালার প্রস্তাব দিতে হবে।
ড. ইউনূস আরও বলেন, জাতিসংঘের বক্তব্যের আন্তর্জাতিক গুরুত্ব রয়েছে। তাই একটি নিরপেক্ষ ও নৈতিক সাংবাদিকতার পরিবেশ নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি উল্লেখ করেন, যদি কোনো গণমাধ্যম মিথ্যা তথ্য ছড়াতে থাকে, তবে তাদের অবহিত করা জরুরি—যাতে সাধারণ মানুষ তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
জবাবে ইউনেস্কোর হেড অব অফিস সুসান ভিজ জানান, তাদের প্রতিবেদনটিতে ‘স্ব-নিয়ন্ত্রণ’ ও গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল আচরণের বিষয়ে সুস্পষ্ট সুপারিশ রাখা হয়েছে। প্রতিবেদনটি আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে তৈরি হয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ—সরকারি কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিচার বিভাগের জন্য প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
প্রকল্প কর্মকর্তা মেহেদী বেনচেলাহ জানান, সাংবাদিকদের নিরাপদ কাজের পরিবেশ এবং নারী সাংবাদিকদের বার্তাকক্ষে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই প্রতিবেদন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।
ইউএনডিপির ‘এসআইপিএস’ প্রকল্প এবং ইউনেস্কোর গণমাধ্যম উন্নয়ন ম্যান্ডেটের আওতায় প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং তথ্যপ্রবাহের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেই এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।