প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ২০:১৭
সৌদি আরবে ৭৩ বছর ধরে চলমান কঠোর মদ নিষেধাজ্ঞা শিথিলের প্রস্তুতি চলছে। দেশের ঐতিহাসিক এই নিষেধাজ্ঞা ২০২৬ সাল থেকে ভিন্ন আঙ্গিকে প্রয়োগ হতে পারে। সরকারি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নির্দিষ্ট লাইসেন্সধারী স্থানগুলোতে মদ বিক্রি ও পান করা বৈধ হবে বলে জানা গেছে। এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছে বিশ্বব্যাপী পর্যটন ও বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্য এবং ‘ভিশন ২০৩০’ কর্মসূচির বাস্তবায়ন।
সৌদি আরবে ১৯৫২ সাল থেকে মদ নিষিদ্ধ ছিল। দেশটির নাগরিকরা যেমন মদ পান করতে পারেনি, তেমনি বিদেশি নাগরিকদের জন্যও তা ছিল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যদিও ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে রিয়াদে অমুসলিম কূটনীতিকদের জন্য সীমিত পরিসরে মদ বিক্রি শুরু হয়। এ থেকে বোঝা যায় আগামি সময়ে নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে চলেছে।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী দেশজুড়ে প্রায় ৬০০টি নির্দিষ্ট স্থানে মদ বিক্রি ও সেবনের অনুমতি দেওয়া হতে পারে। এসব স্থানের মধ্যে রয়েছে পাঁচতারকা হোটেল, বিলাসবহুল রিসোর্ট, কূটনৈতিক এলাকা, এবং সৌদি আরবের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন প্রকল্প যেমন নিওম, সিন্দালা দ্বীপ ও রেড সি প্রজেক্ট। এসব এলাকায় পর্যটক ও বিদেশিদের জন্য মদ গ্রহণ সহজতর হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত সৌদি আরবের অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। রিয়াদ এক্সপো ২০৩০ এবং ফিফা বিশ্বকাপ ২০৩৪ এর প্রস্তুতির অংশ হিসেবেও এটি দেখা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী পর্যটন খাতে সৌদি আরবের ভূমিকা জোরদার করার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, দেশটির সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মদ নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘদিন ধরে কঠোরভাবে বজায় ছিল। ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী মদপান হারাম হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় এই আইন ছিল অত্যন্ত কঠোর। তবে বর্তমানে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে দেশটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
পরিবর্তিত বিশ্ববাজারে সৌদি আরবের অবস্থান শক্তিশালী করতে এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে ‘ভিশন ২০৩০’ কর্মসূচি কার্যকর করা হচ্ছে। এই নীতিমালার আওতায় মদ নিষেধাজ্ঞার শিথিলকরণ একটি বড় ধাপ হিসেবে ধরা হচ্ছে। সামনের বছরগুলোতে দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বড় ধরনের পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা প্রবল।
সৌদি মোমেন্টেসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নতুন আইন প্রণয়নের ফলে পর্যটন খাত বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের বৈশ্বিক অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে। এছাড়াও নতুন নীতিমালা স্থানীয় অর্থনীতিতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই সিদ্ধান্ত সৌদি আরবের জন্য এক নতুন যুগের সূচনা বলে মনে করা হচ্ছে, যেখানে ধর্মীয় বিধি-বিধান এবং আধুনিকতার মধ্যে একটি নতুন সমঝোতা তৈরি হবে।