ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ এবং নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই দাবি জানান। তাদের দাবি, যদি তাদের আবেদন না মেনে নেওয়া হয়, তবে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা কলেজের মো. শফিক উদ্দিন এবং ইডেন মহিলা কলেজের সুমাইয়া আক্তার বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, ঢাবির উপ-উপাচার্য এবং নিউমার্কেট থানার ওসির পদত্যাগের জন্য সোমবার বিকেল ৪টার মধ্যে তাদের পদত্যাগ করা উচিত, নতুবা তারা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
এই আন্দোলনটি তখন আরও তীব্র হয়ে ওঠে, যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনার পর ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের সব পরীক্ষা এবং ক্লাস স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে সাত কলেজের চূড়ান্ত পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। এর আগে, ২৬ জানুয়ারি, সাত কলেজের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করে। তারা প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা অবস্থান নেয় এবং রাতে মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে রওনা দেয়। সেখানে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে এসে তাদের ধাওয়া দেন, পরে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা পাল্টা ধাওয়া দেন। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে, যার ফলে অন্তত ৪০ শিক্ষার্থী আহত হন।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য তারা ঢাবির প্রো-ভিসি (শিক্ষা)-এর কাছে যান, কিন্তু তিনি অশোভন আচরণ করেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তারা স্মারকলিপি দেওয়ার পরেও তিনি সেটি পড়েননি এবং তাদেরকে অবজ্ঞা করে রুম থেকে বের করে দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রো-ভিসি তাদের বিষয়ে অবহিত ছিলেন না এবং তাদের প্রতি তার আক্রমণমূলক ব্যবহার ছিল। এর ফলে তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয় এবং তারা আন্দোলনে গিয়ে এই অশোভন আচরণের প্রতিবাদ জানান।
এদিকে, পরিস্থিতি ক্রমাগত উত্তপ্ত হতে থাকলে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঘোষণা করেন, যদি তাদের দাবি পূরণ না হয়, তারা আরও বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন। তাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য, সাত কলেজের সমস্যা সমাধান করা এবং শিক্ষার্থীদের দাবি প্রতিষ্ঠা করা। এই আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভও সৃষ্টি করেছে, কারণ অনেকেই তাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে আছেন এবং তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো সমর্থন করছেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে একে অপরের প্রতি সমর্থন এবং সহযোগিতার চিত্র স্পষ্টভাবে ফুটে উঠছে, যা আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করছে।
প্রসঙ্গত, সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দাবি করে আসছেন। তাদের দাবি ছিল, কলেজগুলোর জন্য পর্যাপ্ত আসন সংখ্যা বাড়ানো, এবং শিক্ষার মান উন্নত করা। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাত কলেজের গুরুত্ব উপেক্ষিত হচ্ছে এবং তাদের সমস্যাগুলোর প্রতি কর্তৃপক্ষের কোনো মনোযোগ নেই। তাদের এই দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সমাধানে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ আশা করছেন।
যদিও আন্দোলনকারীরা তাদের দাবির পক্ষে একমত, তবে প্রশাসন এখনও এ বিষয়ে কোনো স্থায়ী সমাধান নিয়ে এগিয়ে আসেনি। সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা এবার তাদের আন্দোলন আরও তীব্র করার হুমকি দিয়েছেন, এবং জানিয়েছেন, যদি তাদের দাবিগুলি অবিলম্বে পূর্ণ না হয়, তবে তারা ভবিষ্যতে আরও কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবেন। এই ঘটনার পর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নানা আলোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়েছে। তবে, সাত কলেজের আন্দোলনকারীরা তাদের ঐক্য ধরে রাখতে পেরেছেন, এবং আগামী দিনে তাদের দাবির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এদিকে, সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজেদের সমস্যাগুলি নিয়ে আরও বৃহত্তর প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার কথা ভাবছেন। তাদের মধ্যে এমনও পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে সমগ্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে, এবং তাদের দাবিগুলি আরো বৃহত্তর জনসমক্ষে তুলে ধরা যায়। তারা মনে করছেন, তাদের দাবি যদি শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় থাকে, তবে তাদের আন্দোলন সীমাবদ্ধ হবে, কিন্তু যদি তারা পুরো দেশের শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি গড়ে তুলতে পারেন, তবে তাদের আন্দোলন আরও শক্তিশালী হবে।
সাত কলেজের আন্দোলন এভাবে অব্যাহত থাকলে, এটি দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি উদাহরণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাদের আন্দোলন শুধুমাত্র সাত কলেজের জন্য নয়, বরং দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও একটি সংকেত হবে, যাতে শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায়। শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলনকে আরও সংগঠিত ও প্রভাবশালী করতে আগ্রহী, এবং তারা আশা করছেন, তাদের দাবি যত দ্রুত সম্ভব মেনে নেওয়া হবে।
এখন দেখার বিষয় হলো, সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া কী হয়। যদি তাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়, তবে এটি একটি বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে, যা অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আন্দোলনকেও প্রভাবিত করতে পারে। তবে, যদি প্রশাসন তাদের দাবি উপেক্ষা করে, তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আরও জোরদার হতে পারে, এবং তাদের বিরোধিতা আরও তীব্র হতে পারে।
এদিকে, সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখতে প্রস্তুত, এবং তারা তাদের দাবিগুলি কার্যকর করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের লক্ষ্য, দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।