প্রকাশ: ১২ মে ২০২৫, ১১:৫
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সাফল্যের এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার মানিক রহমান। পা দিয়ে লিখে এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়ার পর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বি ইউনিটে মেধা তালিকায় ১৯২তম স্থান অর্জন করেছেন তিনি। রোববার (১১ মে) দুপুরে প্রকাশিত ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে এ বিষয়টি জানা যায়।
মানিকের সাফল্যে তার পরিবার এবং এলাকা জুড়ে চলছে আনন্দের বন্যা। এলাকাবাসী ও আত্মীয়-স্বজনরা তার সাফল্যে মিষ্টিমুখ করেছেন। মানিকের বাবা-মা, শিক্ষকরা তার এই অর্জনে অত্যন্ত গর্বিত। তিনি ২০২২ সালে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০২৪ সালে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
মানিক রহমান কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের মিজানুর রহমান এবং মরিয়ম বেগমের বড় ছেলে। তার পরিবার তাকে সবসময় উৎসাহিত করেছে এবং তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনোই তাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারেনি। তার বাবা-মা জানান, মানিক জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী, তার দুটি হাত নেই এবং একটি পা অন্যটির তুলনায় অনেকটা ছোট। তবে তারা কখনো তাকে প্রতিবন্ধী হিসেবে দেখেননি। ছোটবেলা থেকেই পা দিয়ে লেখার অভ্যাস গড়ে তুলে মানিক। তার পা দিয়ে লেখা খুব সুন্দর এবং পড়াশোনায় সে সবসময় মনোযোগী।
মানিকের বাবা-মা আরও জানান, তারা চান তার সন্তান ভবিষ্যতে একজন দক্ষ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে দেশ ও জাতির সেবা করুক। বাবা মিজানুর রহমান বলেন, "আমরা আমাদের সন্তানকে কখনো প্রতিবন্ধী হিসেবে মনে করিনি, বরং তার এই সাফল্য আমাদের জন্য এক গর্বের বিষয়। আমরা আশা করি, মানিক তার স্বপ্ন পূরণ করবে।"
মানিক বলেন, "আমার দুটি হাত না থাকলেও আল্লাহর রহমত, বাবা-মা এবং শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় আমি সকল পরীক্ষায় সফল হয়েছি। এ বছর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ১৯২তম স্থান অর্জন করেছি। আমি চাই, সকলেই আমার জন্য দোয়া করবেন, যাতে আমি একজন দক্ষ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে দেশের সেবা করতে পারি।"
মানিকের এই অনুপ্রেরণামূলক সাফল্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়—শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনোই মানুষের স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা হতে পারে না, বরং ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রমই সাফল্যের চাবিকাঠি।