বিমানভাড়া বাড়ল, গুনতে হবে দ্বিগুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ১৪ই এপ্রিল ২০২২ ০৭:৩৭ অপরাহ্ন
বিমানভাড়া বাড়ল, গুনতে হবে দ্বিগুণ

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে জেট ফুয়েলের দামও বেড়েই চলেছে। গত তিন মাসে জেট ফুয়েলের দাম বেড়েছে প্রতি লিটারে ২৫ টাকা। এছাড়াও গত ১৮ মাসে জেট ফুয়েলের দাম বেড়েছে প্রায় ১২০ শতাংশ। ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের দাম ছিল ৪৬ টাকা। সেখানে ২০২২ সালের এপ্রিলে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ টাকায়। ধারাবাহিকভাবে জেট ফুয়েলের দাম বাড়ায় আকাশপথে ভাড়াও বেড়েছে। কোভিডের আগের তুলনায় বর্তমানে ভাড়া বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। 


বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি জেট ফুয়েলের দাম লিটারপ্রতি ১৩ টাকা বাড়িয়েছে। এর ফলে বর্তমানে জেট ফুয়েলের দাম দাঁড়িয়েছে লিটারপ্রতি ১০০ টাকা।



বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, জেট ফুয়েলের আন্তর্জাতিক মূল্য প্রতি লিটার এক দশমিক শূন্য ২ ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে। সেই হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারেই এখন জেট ফুয়েলের দাম লিটার প্রতি ১২১ থেকে ১২২ টাকা। সরকার ভর্তুকি দিয়ে ১০০ টাকা লিটার দরে বিক্রি করছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে না কমলে জেট ফুয়েলের দাম কমানোর কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে বিপিসি। ২০২১ সালে জেট ফুয়েলের চাহিদা ছিল তিন লাখ ১৯ হাজার ৭০৮ মেট্রিক টন, যার পুরোটাই আমদানি নির্ভর।


এ বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) পরিচালক (বিপণন/অপা. ও পরি.) খালিদ আহম্মেদ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তি। বর্তমানে আমাদের প্রতি লিটার জেট ফুয়েল কিনতে হচ্ছে ১২১ থেকে ১২২ টাকায়। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম না কমা পর্যন্ত আমাদের কিছুই করার নেই।


এদিকে, জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে ভাড়াও। কারণ একটি ফ্লাইটের পরিচালনা ব্যয়ের অন্তত ৪০ ভাগ নির্ভর করে জেট ফুয়েলের দামের ওপর। তাই জ্বালানির (জেট ফুয়েলের) দাম বৃদ্ধি পেলে সরাসরি প্রভাব পড়ে ভাড়ায়।


কোভিডের আগে ঢাকা-যশোর রুটে সর্বনিম্ন ভাড়া ছিল দুই হাজার ৭০০ টাকা, এটা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৮০০ টাকায়। কোভিডের আগে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে সর্বনিম্ন ভাড়া ছিল তিন হাজার ৭০০, এখন পাঁচ হাজার ৮০০ টাকা। দুই হাজার ৭০০ টাকা থেকে বেড়ে ঢাকা-সৈয়দপুরের ভাড়া এখন চার হাজার ৮০০ টাকা। চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীর ভাড়া হয়েছে সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা। কোভিডের আগে যা ছিল দুই হাজার ৭০০ টাকা। সামনে ঈদ, এ সময় আকাশপথে যাত্রী বাড়ে। ফলে ভাড়া বাড়ায় যাত্রীদের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়বে।


ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের দাম ছিল ৪৬ টাকা। সেখানে ২০২২ সালের এপ্রিলে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের দাম হয়েছে ১০০ টাকা। জেট ফুয়েলের দাম বাড়লে ভাড়া বৃদ্ধি পাবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ উড়োজাহাজ পরিচালন ব্যয়ের ৪০ শতাংশই জ্বালানি খরচ। লোকসান দিয়ে তো উড়োজাহাজ চালানো যাবে না। এতে করে যাত্রীদের ওপর প্রভাব পড়বে। এছাড়া আমরা জানি প্রবৃদ্ধিতে পর্যটন খাতের অবদান ৩ শতাংশের ওপরে, এখাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই সরকারের উচিত জেট ফুয়েলের দাম কমানো, এখাতে আরও ভর্তুকি দেওয়া। অথবা অভ্যন্তরীণ রুটের ভ্যাট কমাতে হবে।


জেট ফুয়েলের দাম বাড়ার ফলে যাত্রীদের ভাড়া বাড়বে। ফলে আকাশপথে ভ্রমণকারীর সংখ্যা কমবে। যা দেশের উড়োজাহাজ শিল্পে বড় প্রভাব ফেলবে। এছাড়া পর্যটন শিল্পের ওপরও প্রভাব পড়বে, মানুষ ভ্রমণবিমুখ হবে। জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) দেশের পর্যটন খাতের অবদান তিন দশমিক শূন্য ২ শতাংশ বলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৭৬ হাজার ৬৯০ কোটি টাকার বেশি।


পর্যটন নিয়ে বিবিএস কর্তৃক প্রথমবারের মতো প্রকাশিত প্রতিবেদনে ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট-২০২০ অনুসারে, মোট কর্মসংস্থানের আট দশমিক শূন্য ৭ শতাংশের সুযোগ তৈরি করছে পর্যটন খাত। জেট ফুয়েলের দাম বাড়লে এখাতে আরও ধস নামবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।


এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পরিচালক (বিপণন, পরিকল্পনা ও জনসংযোগ) আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবো না। কারণ এটা স্পর্শকাতর বিষয়। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে ভালো বলতে পারবে।


বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিমান ও সিএ) মো. অলিউল্লাহ বলেন, আমি নতুন এসেছি। এই বিষে তেমন কিছু জানি না।


অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ওয়াহেদুল আলমের মতে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে এয়ারলাইন্সগুলোর ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এয়ারলাইন্সগুলো ব্যয়টা নিজের ওপরে রাখে না, জনগণের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। নিজেদের টিকিয়ে রাখতেই জনগণের ওপর বাড়তি ব্যয় চাপিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে তারা।