প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৫, ১২:২৬
বারবার ঘোষণা দেওয়া সত্ত্বেও দুর্বল ব্যাংকগুলোকে টাকা ছাপিয়ে সহায়তা দেওয়া বন্ধ করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ইতোমধ্যে ১২টি ব্যাংককে প্রায় ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি ব্যাংক আমানত ফেরত দিতে ৩৩ হাজার কোটি টাকা পেয়েছে ডিমান্ড লোনের মাধ্যমে এবং আরও ১৯ হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন চলতি হিসাব ঘাটতির
কারণে একইভাবে রূপান্তর করা হয়েছে। এভাবে বিপুল অঙ্কের অর্থ সহায়তা পাওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, যার পরিমাণ ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এরপর রয়েছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, এবি ব্যাংক, বিসিবিএল, আইসিবি, বেসিক ও পদ্মা ব্যাংক। যদিও বাংলাদেশ
ব্যাংক শুরুতে ঘোষণা দিয়েছিল যে, আর কোনো ব্যাংককে টাকা ছাপিয়ে ঋণ দেবে না, কিন্তু বাস্তবে তা অনুসরণ করা হয়নি। ব্যাংক নির্বাহীরা বলছেন, এই সাময়িক সহায়তা অস্থিরতা কমালেও দীর্ঘমেয়াদে সমাধান আনতে পারছে না। এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন দাবি করেন, তাদের বড় অঙ্কের লেনদেন ব্যতিক্রম নয় এবং আগের পরিচালনার সময় অনিয়মের কারণে সহায়তা প্রয়োজন হয়েছে।
অন্যদিকে এসআইবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউজ্জামান মনে করেন, ব্যাংকের কার্যক্রম স্বাভাবিক হতে এখনও ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লাগবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, ক্ষুদ্র আমানতকারীরা যেন তাদের অর্থ ফেরত পেতে পারেন, সে জন্যই এই সহায়তা অব্যাহত রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথম ধাপে ছয়টি দুর্বল ব্যাংককে একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যদিও এক্সিম ব্যাংক এতে স্পষ্টভাবে অসম্মতি জানিয়েছে।
এ অবস্থায় দেশের ব্যাংকিং খাতে আস্থার সংকট যেমন বাড়ছে, তেমনি ভবিষ্যতে এ ধরনের সংকট এড়াতে ব্যাংকিং সংস্কারে কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজন আরও গভীরভাবে অনুভব করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা মনে করেন, পুনঃঋণ নয়, বরং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করলেই কেবল এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব।