সারাদেশে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন এর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আর এই লকডাউনে সরকারি- বেসরকারি অফিস, আদালত, শিল্প কলকারখানা, শপিংমল ও দোকানপাট বন্ধ থাকলেও সচল রয়েছে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে ভারত থেকে পণ্য আমদানি-রপ্তানিসহ বন্দরের সকল কার্যক্রম।
স্বাস্থ্য বিধি মেনে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানান বন্দর কতৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) হিলি পানামা পোর্ট ঘুরে দেখা যায়, পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে ৬ দিন বন্ধ থাকার পর, সরকার ঘোষিত ১৪ দিনের কঠোর লকডাউনে গত (২৫ জুলাই) ভারত থেকে পণ্য আমদানি কার্যক্রম চালু হয়েছে।
প্রথম দিন অর্থাৎ রবিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভারত থেকে বন্দরে পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছে ১০৮ টি।পরের দিন ২৬ জুলাই সোমবার ১৬৪ টি, ২৭ তারিখে ১৬৮টি, ২৮ তারিখে ১৭২ টি ও ২৯ জুলাই ১৮০ টি পণ্যবাহী ট্রাক ভারত থেকে বন্দরে প্রবেশ করেছে।
পরবর্তীতে দেশি ট্রাকে পণ্য গুলো লোড হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেড়ে গেছে।
ভারত থেকে হিলি স্থলবন্দরে প্রবেশ পথ চেকপোস্টে রয়েছে ক্যানেল মেশিন, যেটির মধ্যে ভারত থেকে আসা ট্রাক চালক ও হেলপারদের প্রবেশ করে স্প্রে করা হচ্ছে।
সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে তাদের নিকট কাগজপত্র আদান-প্রদান করা হচ্ছে। আবার বন্দর মুখে প্রবেশের সময় পণ্যবাহী ট্রাকসহ চালক হেলপারদের জীবাণু নাশক দিয়ে স্প্রে করা হচ্ছে। মেশিন দ্বারা তাদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে।
ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকগুলো বন্দরে প্রবেশ এর পরে দ্রুত সময়ে আনলোড করে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
বন্দর অভ্যন্তরে সকল শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে, মুখে মাস্ক পরিধান করে ভারতীয় এবং দেশি ট্রাকগুলো লোড-আনলোড করছেন।
হিলি স্থলবন্দরের শ্রমিক সরদার গোলাম মোর্শেদ জানান, বন্দরে আমার প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন করছি। তারা সরকারি বিধিনিষেধ অনুযায়ী বন্দরে কাজ করছেন।
ঈদের ছুটি শেষে বন্দরে উৎসব মুখর পরিবেশে কাজ করছে শ্রমিকরা সেই সাথে বন্দরে ফিরে এসেছে কর্মচঞ্চলতা।
হিলি পানামা পোর্ট লিংকের গণসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন প্রতাব মল্লিক, জানান, ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক ও চালক হেলপারদের স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বন্দরে প্রবেশ করানো হচ্ছে।
পবিত্র ঈদুল আজহা ছুটি শেষে প্রথম দিন রবিবার ১০৮ টি ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক এই বন্দরে প্রবেশ করলেও পরবর্তীতে গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ১৮০ টি পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করেছে।
হিলি পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনন্ত কুমার চক্রবর্তী (নেপাল) জানান, দেশে বর্তমানে করোনার তৃতীয় ঢেউ চলছে। সংক্রমণ রোধে সরকার ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন ঘোষণা দিয়েছে। আমরা সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্য বিধি মেনে বন্দরের পণ্য আমদানি-রপ্তানিসহ সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক রেখেছি।
এছাড়াও বন্দরের অভ্যন্তরে কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারী, বন্দর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকরা সকল প্রকার স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলছেন বলে জানান তিনি।
হিলি স্থলবন্দরের কাস্টমসের সহকারী কমিশনার কামরুল ইসলাম জানান, করোনা কালিন সময়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্য বিধি মেনে বন্দরে আমদানি রফতানি ও বন্দরের অভ্যান্তরে পণ্য লোড- আনলোড এর কাজ চলছে।
হিলি বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ হারুন জানান, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন চলছে।
তবে সরকারি নির্দেশনায় স্বাস্থ্য বিধি মেনে দেশের প্রতিটি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিসহ সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে বলা হয়েছে। এটি রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত, আমরাও তা মেনে নিয়েছি।
তিনি আরও জানান, হিলি বন্দরে যে সকল আমদানি-রপ্তানিকারকরা রয়েছেন তারা অবশ্যই সরকারি বিধিনিষেধ অনুযায়ী তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। সেই সাথে তারা মাস্ক পরিধান করে তাদের অফিস থেকে বন্দরে আসা-যাওয়া করবেন এবং তাদের গলায় পরিচয়পত্র থাকতে হবে মর্মে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।
হাকিমপুর( হিলি) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর- এ আলম জানান, সরকারি নির্দেশনায় স্বাস্থ্য বিধি মেনে যেহেতু দেশের সকল স্থলবন্দর এর কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার কথা বলা হয়েছে সেহেতু হিলি বন্দরে পণ্য আমদানি রফতানিসহ সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। তবে স্বাস্থ্য বিধি নিশ্চিত এর বিষয়টি আমরা তদারকি করছি।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।