হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্লীপ অনুদানের মনগড়াভাবে অতিরিক্ত ক্রয়মূল্য দেখিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে বিল ভাউচার দাখিল করে সরকারি অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোহিণী কান্ত ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে।
২০২০-২১ অর্থবছরে দাখিলকৃত ভাউচারে দেখা যায়, খেলাধুলার সরঞ্জামাদি অর্থাৎ ফুটবল বা কেরাম প্রতিটির গড় মূল্য হচ্ছে ১৩৩৩ টাকা ১৩ পয়সা। এ ছাড়া খাতা বা কলম প্রতিটির গড় মূল্য হচ্ছে ২৯ টাকা ১৬ পয়সা। এতে করে একদিকে যেমন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকার, অপরদিকে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
তথ্য অধিকার আইন ২০০৯খ্রি.এর ধারা - ৯এর অধীন চাহিত তথ্য পাওয়া মোতাবেক, জানা যায়,আজমিরীগঞ্জ ১ নং সদর ইউনিয়নের রনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোহিণী কান্ত ভট্টাচার্য সুদীর্ঘ ২৬ বছর যাবৎ কর্মরত।এরই সুবাদে বিভিন্ন প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত অনুদান বা বরাদ্দকৃত অর্থ অত্যন্ত সুকৌশলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে আত্মসাৎ করে আসছেন।
এরই ধারাবাহিকতায়, রনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্য ১ থেকে ২০০ জন বিধায়, নিয়মানুযায়ী স্লীপ গ্র্যান্ট এর অনুদানকৃত অর্থের পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা।২০২০-২১ অর্থবছরে অর্থাৎ করোনাকালীন সময়ে অনুদানকৃত ৫০ হাজার টাকার বিপরীতে খরচ দেখানো হয়,১/ স্বাস্হ্য সুরক্ষা বাবদ - ১০ হাজার ২/ শেখ মুজিবের বাণী ও মুক্তিযুদ্ধের বই - ২ হাজার ৩/ অফিসরুম টাইলস - ২০ হাজার ৪/ দরিদ্র ছাত্রদের খাতা কলম, ক্রীড়া সরঞ্জাম ১৫ হাজার ৫/ বৈদ্যুতিক ফিটিংস ৩ হাজার সহ মোট ৫০ হাজার টাকা। দাখিলকৃত ভাউচারের ১ম পর্যায়ে ৫/ ১২০ টি খাতা ও ১২০ টি কলম ক্রয় বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ৭ হাজার টাকা।
এতে করে প্রতিপিচ খাতা কলমের গড় মূল্য হচ্ছে ২৯ টাকা ১৬ পয়সা। ৮/ ১০০ ফুট টাইলস্ ফিটিং এ খরচ দেখানো হয়েছে ২০ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতিফুটে খরচ হয়েছে ২০০ টাকা। জনৈক রাজমিস্ত্রি জানায়, বর্তমানে প্রতিফুটে খরচ ৬০ টাকার বেশী হওয়ার কথা নয়। ২য় পর্যায়ে ১/ খেলাধুলার সরঞ্জামাদি অর্থাৎ ২টি কেরাম ও ৪টি ফুটবল ক্রয় বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ৮ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতিপিচ কেরাম ফুটবলের গড় মূল্য হচ্ছে ১৩৩৩ টাকা ৩৩ পয়সা। ৪/ মুক্তিযুদ্ধের বই ৫ টির ক্রয়মূল্য ২ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতিটির গড় মূল্য ৫০০ টাকা।
৩য় পর্যায়ে ৩/ টয়লেট পরিস্কারের ব্রাশ, হারপিক, সাবান, মগ বা ড্রাম ক্রয় বাবদ দেখানো হয়েছে ১০ হাজার টাকা ও বৈদ্যুতিক ফিটিংস বাবদ ৩ হাজার সহ সর্বমোট ৫০ হাজার টাকা।অপরদিকে, করোনাকালীন সময়ে অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরে স্লীপ গ্র্যান্ট এর অনুকুলে প্রাপ্ত ৫০ হাজার টাকা অনুদানের বিপরীতে ২য় পর্যায়ে ১/ শিক্ষক শিখানো উপকরণ ক্রয় বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ৪৫০০ টাকা।
সপ্তাহিক বন্ধ শুক্রবার বাদে ২৬ দিনের প্রতিদিন খরচ হচ্ছে ১৭৩ টাকা ০৭ পয়সা। দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের ১২০ টি খাতা কলম ক্রয় বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ৩৬০০ টাকা। অর্থাৎ প্রতিটির ক্রয়মূল্য গড়ে ৩০ টাকা। ৬/ হাতের লেখা, চিত্রাঙ্কন বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ৩৬০০ টাকা। ৭/ ডিসপ্লে বোর্ড, মনিটরিং বোর্ড ক্রয় ও মেরামত বাবদ ৮ হাজার টাকা।
স্কুল ড্রেস ২০ সেট- ৯৩০০ টাকা। ১ম পর্যায়ে ১/ খেলাধুলার সরঞ্জামাদি ক্রয়- ৫০০০ টাকা। ২/ দরিদ্র ছাত্রদের ইউনিফরম বাবদ- ৬ হাজার টাকা। ৩/ সাংস্কৃতিক ও বিভিন্ন দিবস পালনে ব্যানার পোস্টার ২৫০০ টাকা।৪/ ২৫ টি টিফিন বক্স ৫ হাজার অর্থাৎ প্রতিটি ২00 টাকা ৫/ পিটিএ মা ও অভিবাবক সমাবেশে আপ্যায়ন ২৫০০ টাকা সহ সর্বমোট ৫০ হাজার টাকা। এতে করে একদিকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকার অপরদিকে মনগড়াভাবে তৈরিকৃত ভাউচার দাখিল করে সরকারি অর্থ লোপাট করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষক।
এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নৃপেন্ড দাস এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমি এই ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না প্রধান শিক্ষক শুধু আমার কাছ থেকে বিল ভাউচার এর স্বাক্ষর করে নিয়েছে।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোহিণী কান্ত ভট্টাচার্য এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে এলাকায় আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।