প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৫, ১১:৪৪
সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে এক ফ্ল্যাট থেকে কামরুজ্জামান কাকন (২৬) ও কামরুল ইসলাম সাগর (২২) নামে দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতরা বাংলাদেশের উত্তর ভুরুলিয়ার আদর্শপাড়ার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী মো. মোশারফ হোসেন লম্বরির সন্তান। বুধবার স্থানীয় পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুই ভাইয়ের প্রতি মাসের আগে থেকেই সৌদিতে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছিলেন।
মোশারফ হোসেন লম্বরির দাবি, তাঁর বড় ছেলে কাকনকে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করার পর ঢাকার নয়াপল্টনের সামিয়া ইন্টারন্যাশনাল পরিচালক বাহার উদ্দিন ২১ লাখ টাকায় জব ভিসায় কানাডায় পাঠানোর প্রস্তাব দেন। তিন লাখ টাকা পরিশোধ করেও কাকনকে কানাডায় পাঠানো সম্ভব হয়নি। পরে ছোট ভাই সাগরকে চার লাখ ৩০ হাজার টাকায় সৌদি আরবে পাঠানো হয়, কিন্তু সেখানে কাজ দেয়নি।
পরবর্তীতে কাকন ও সাগরকে সৌদি আরবের মদিনায় উচ্চ বেতনে চাকরি দেয়ার প্রলোভনে বাহার উদ্দিন পাঁচ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেয়। গত বছরের ডিসেম্বরে কাকনকে সৌদিতে নিয়ে যাওয়া হলেও সেখানে কাজ না দিয়ে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়। মোশারফ হোসেন উমরা ভিসায় সৌদি গিয়েও ছেলেদের দুরবস্থার কথা জানতে পারেন। তাদেরকে খাবারও ঠিকমত দেওয়া হতো না।
ছেলেদের কাগজপত্র ঠিক করার জন্য বাহার উদ্দিন সেখানে থেকে যান। কাগজপত্র না থাকার কারণে মোশারফ হোসেনের দেশে পাঠানো স্বর্ণও বিমানবন্দরে আটকে যায়। মোশারফ হোসেন এ নিয়ে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন। পরিবারের ধারণা, এসব জটিলতা ও প্রতারণার কারণে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
অপরদিকে, বাহার উদ্দিন নিজেকে এই হত্যাকাণ্ড থেকে অব্যাহতি জানিয়ে বলেন, মোশারফ হোসেন কৌশলে প্রায় ১৩ লাখ টাকার স্বর্ণ ফেরত দেয়নি। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন তিনি। এই ঘটনার কারণে এলাকায় ব্যাপক শোক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।
বাংলাদেশি শ্রমিকদের বিদেশে পাচারের এই মর্মান্তিক ঘটনা সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রয়োজন কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তীব্র করেছে। যে কোনো প্রকার প্রতারণা ও মানবপাচারের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।