প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৫, ১০:৫৫
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন—এই তিন মাসে সারাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা, গণপিটুনি, ধর্ষণ, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও সীমান্তে নির্যাতনের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির করুণ চিত্র।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৭২ জন এবং আহত হয়েছেন ১ হাজার ৬৭৭ জন। এই সময়ে বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ১৯ জন নিহত ও ৯৭৩ জন আহত হয়েছেন, আর আওয়ামী লীগের সংঘাতে নিহত ২ ও আহত ২৪ জন। বিএনপির ১০৫টি কর্মসূচি এ সময় নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, গণপিটুনির মতো আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা সমাজে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত গণপিটুনিতে ১৯ জন নিহত হয়েছেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় সাধারণ মানুষের সহিংসতা ঠেকানো সম্ভব হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
নারী ও শিশু নির্যাতনও এই সময়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২০৮ জন নারী ও শিশু, যাদের মধ্যে ১৩ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার এবং তিনজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৪ জন এবং যৌতুকের কারণে হত্যার শিকার হয়েছেন ১১ জন নারী।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত যৌথ বাহিনীর কার্যক্রম সত্ত্বেও এ সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে নিহত হয়েছেন ৮ জন, যাদের মধ্যে পাঁচজন পুলিশের, একজন র্যাব, একজন কোস্টগার্ড ও একজন যৌথ বাহিনীর গুলিতে নিহত হন।
কারাগার পরিস্থিতি নিয়েও প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। চট্টগ্রামসহ দেশের প্রায় সব কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে তিনগুণ বন্দী রয়েছেন। চিকিৎসকের অভাবে গত তিন মাসে ২২ জন বন্দী মারা গেছেন, যাদের ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে অসুস্থতার কারণে।
সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন ৯ জন এবং আহত হয়েছেন ৫ জন। এর মধ্যে ৭ জন গুলিতে এবং ২ জন নির্যাতনে মারা গেছেন। ৩০ জুন পর্যন্ত ১ হাজার ৭৮৩ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে জোর করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এই সময়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনাও বেড়েছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ৩০ জন সাংবাদিক আহত, ১৬ জন লাঞ্ছিত এবং ১১ জন হুমকির শিকার হয়েছেন। এসব হামলার পেছনে রাজনৈতিক দল, প্রশাসন ও মাদকচক্রের সদস্যদের সম্পৃক্ততা উল্লেখ করেছে 'অধিকার'।