প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৫, ১৮:১১
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার খোর্দা গ্রামের হিন্দুপাড়ায় প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মিঠাই তৈরির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে একদল কারিগর। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চিনি ও পানি জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে হাতি, ঘোড়া, দোয়েল পাখি, মাছসহ বাহারি আকৃতির খাজা বাতাসা। তবে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এই শিল্প আজ সংকটে পড়েছে।
খোর্দা গ্রামের গোপাল চন্দ্র ও রিতা রানী দম্পতি জানান, প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ মন মিঠাই তৈরি করেও সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে চিনি ও জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো আর লাভ থাকছে না। তাদের ভাষ্য, “দিনরাত পরিশ্রম করেও সংসার টানতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যদি অল্প সুদে সরকারি ঋণ পেতাম তাহলে ব্যবসাটা বাড়াতে পারতাম।”
এই দম্পতির মতো ওই পাড়ার অনেকেই বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখেছেন। কেউ কেউ লাভ কমে যাওয়ায় ইতোমধ্যে এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। রিতা রানী বলেন, “এনজিও আর চেনাজানা মানুষের কাছ থেকে ধার করে এই ব্যবসা চালানো কঠিন হয়ে গেছে। সরকার যদি পাশে দাঁড়াত, তাহলে হয়তো ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম।”
গোপাল চন্দ্র আরও জানান, সারা বছর মিঠাই তৈরির কাজ হয় না। কালীপূজা, দুর্গাপূজা, পহেলা বৈশাখ, ঈদ কিংবা গ্রাম্য মেলাকে কেন্দ্র করে কিছুটা চাহিদা বাড়ে। কিন্তু সারা বছরের আয়-ব্যয় সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যায়।
পাঁচবিবি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে এখনও ছড়িয়ে আছে এই মিঠাই তৈরির ঐতিহ্য। বাগজানা ইউনিয়ন, কুড়ি পাড়া কিংবা হিন্দুপাড়ার মতো এলাকাগুলোতে এখনো অনেক কারিগর এই পেশায় যুক্ত। চাহিদা থাকলেও পর্যাপ্ত পুঁজি ও সহায়তা না থাকায় এই শিল্পের বিকাশ থমকে আছে।
এ বিষয়ে পাঁচবিবি উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, “আমরা বেকার ও স্বল্পআয়ের যুবক-যুবতীদের বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। তাদের স্বল্পসুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। মিঠাই শিল্পের মতো হস্তশিল্পের ক্ষেত্রেও আগ্রহীরা চাইলে সহায়তা পেতে পারেন।”
স্থানীয়দের দাবি, খাজা বাতাসা ও অন্যান্য মিঠাই শিল্প রক্ষা ও সম্প্রসারণে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি। নইলে গ্রামীণ ঐতিহ্যের এই শিল্প হারিয়ে যেতে পারে।