প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৫, ১৯:৪৩
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় অবস্থিত ঐতিহাসিক গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন এবার প্রবল দাবানলের কবলে পড়ে এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। ৯৬ বছরের পুরনো জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন লজসহ অন্তত ৫০ থেকে ৮০টি অবকাঠামো সম্পূর্ণভাবে আগুনে পুড়ে গেছে। ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস (এনপিএস) জানিয়েছে, দাবানলের কারণে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের নর্থ রিম পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং শত শত বাসিন্দা ও পর্যটককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সিবিএস নিউজ জানায়, দুটি বড় দাবানল— ড্রাগন ব্রাভো ফায়ার ও হোয়াইট সেজ ফায়ার— উত্তর প্রান্তজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ড্রাগন ব্রাভো ফায়ারই সরাসরি গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন লজে আঘাত হানে।
৪ জুলাই হঠাৎ এক বজ্রপাতের মাধ্যমে ড্রাগন ব্রাভো ফায়ারের সূত্রপাত ঘটে বলে জানা গেছে। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই এটি প্রায় ৫০০ একর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রতি ঘণ্টায় ৩২ কিমি গতিতে আগুন ছড়াতে থাকে, কখনো কখনো হাওয়ার গতিবেগ ৬৪ কিমিতে পৌঁছায়। আরেক দাবানল হোয়াইট সেজ ফায়ার ৯ জুলাই শুরু হয়ে ১৩ জুলাই পর্যন্ত ৪০,১৮৬ একর এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন লজ মূলত একটি মৌসুমি হোটেল, যা ১৯২৮ সালে নির্মিত হয়েছিল এবং ১৯৩২ সালের এক অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংস হয়ে ১৯৩৭ সালে আবার নির্মিত হয়।
প্রতি বছর মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত খোলা থাকে এই লজ, চলতি বছরও এটি ১৫ মে চালু হয়েছিল এবং ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত চালু থাকার কথা ছিল। কিন্তু এবারের দাবানলে লজের মূল ভবন ও আশপাশের ১২০টি কেবিন একেবারে ছাই হয়ে গেছে। দাবানলের কারণে এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক।
৫০০ জনের বেশি ফায়ারফাইটার দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন দাবানল নিয়ন্ত্রণে। আকাশপথে রাসায়নিক স্প্রে করে আগুন ঠেকানোর চেষ্টাও চলছে। তবে চলমান তাপপ্রবাহ, শুষ্ক আবহাওয়া ও দমকা হাওয়ার কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।
এদিকে আগুনে একটি চিকিৎসা বর্জ্য প্ল্যান্ট ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় ক্লোরিন গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর ফলে শ্বাসকষ্ট, চোখে জ্বালাপোড়া এমনকি চোখের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে বলে সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিভাগ।
এই দাবানলে কোনো প্রাণহানির খবর এখনো পাওয়া যায়নি। তবে প্রাকৃতিক ঐতিহ্য, স্থাপনা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি— সবমিলিয়ে অঞ্চলজুড়ে তৈরি হয়েছে এক গভীর সঙ্কট।