আর মাত্র এক দিন পরই মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদ উপলক্ষে ৫ থেকে ১৪ জুন টানা ১০ দিন ছুটি কাটাবেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। স্কুল, কলেজে সেই ছুটি আরও বেশি, ১৯ জুন পর্যন্ত। দীর্ঘ এই ছুটি উপভোগ করতে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক ভ্রমণ পিপাসুদের সমাগম হয় মৌলভীবাজারে। এবারও ঈদের ছুটিতে ভ্রমণপিপাসুদের বরণে প্রস্তুত পর্যটন জেলা মৌলভীবাজার।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, জেলার প্রায় সবগুলো আবাসিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট ইতোমধ্যে আগাম বুকিং দিয়ে রেখেছেন পর্যটকরা। তুলনামূলক ভালো হোটেলগুলোতে কোনও কক্ষ খালি নেই। আগামী কয়েকদিনে এখানে লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটবে বলে আশা তাদের।
জেলা আবাসিক হোটেল-মোটেল মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজারে দুই শতাধিক হোটেল-রিসোর্ট রয়েছে। এরমধ্যে মধ্যে দুটি পাঁচতারকা এবং পাঁচটি রয়েছে ফোরস্টার মানের। এগুলোর অধিকাংশই শ্রীমঙ্গলে। পুরো জেলায় শতাধিক পর্যটন স্পট থাকলেও দেশ-বিদেশের ভ্রমণপিপাসুদের প্রথম পছন্দ হলো চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলা। ফলে এই দুই উপজেলাসহ জেলার পর্যটন স্পটগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেছে পাঁচ তারকা মানের রিসোর্টসহ দেড় শতাধিক রিসোর্ট, ইকো কটেজ, হোটেল, মোটেল।
পর্যটকদের জন্য শ্রীমঙ্গলে আছে প্রায় ১০০টি হোটেল রিসোর্ট। এসব রিসোর্টের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা গতকাল বলছেন, ইতোমধ্যে আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত হোটেল-রিসোর্টগুলোর প্রায় শতভাগআগাম বুকিং হয়ে গেছে। ঈদের দিন থেকে সব হোটেল, রিসোর্ট হাউসফুল পর্যটক থাকবে বলে আশা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
হোটেল আবাসন ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরখানেক ধরে ভারতের ভিসা বন্ধ থাকায় দেশের পর্যটন সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। ঈদের ছুটিতে ঘুরে দেখা যেতে পারে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মনু ব্যারেজ-মাতারকাপন সুইস গেট, মনু নদী তীরবর্তী শহরের শান্তিভাগ ওয়াকওয়ে, বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক, হজরত শাহ মোস্তফা রহ. এর মাজার, কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ , হামহাম জলপ্রপাত, লাসুবন, শমসেরনগর গল্ফ মাঠ, ক্যামেলিয়া লেক, আদমপুর বনবিট, খাসিয়া পুঞ্জি, পদ্মছড়া চা বাগান লেক, বড়লেখার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, হাকালুকি হাওর, পাথারিয়া হিলস রিজার্ভ ফরেস্ট, আগর বাগান, শ্রীমঙ্গলের মৎস্য অভয়াশ্রম বাইক্কা বিল, হাইল হাওর, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, বধ্যভূম৭১, দার্জিলিং টিলা, টি মিউজিয়াম, ভাড়াউড়া চা বাগান লেক, সাত কালার নীল কণ্ঠ টি কেবিন, সীতেশ বাবুর মিনি চিড়িয়াখানা,হরিণ ছড়া গল্ফ মাঠ, লাল টিলা, গরম টিলা, মণিপুরী পল্লী, রাজনগরের কমলা রানির দীঘি, বরথল চা বাগান লেক, কুলাউড়ার পৃথিমপাশা নবাববাড়ি, রবিরবাজার জামে মসজিদ, জুড়ীর কাশ্মির টিলা, লাঠি টিলাসহ জেলার বিভিন্ন চা বাগানের নয়নাভিরাম দর্শনীয় স্থান।
জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গলের লেমন গার্ডেন রিসোর্টের মালিক সেলিম মিয়া বলেন, রাধানগর ও ডলুবাড়ি এলাকার সব রিসোর্টেই আগাম বুকিং পেয়েছি। আমাদের লেমন গার্ডেন রিসোর্টে ৮ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত প্রায় সব কক্ষই আগাম বুকিং হয়ে গেছে। পর্যটকদের কথা ভেবে আমরা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেছি।
ট্যুর অপারেটর অ্যান্ড ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রাসেল আলম জানান, ঈদের এই লম্বা ছুটিতে বিদেশি পর্যটক নেই বললেই চলে। আর বিদেশি পর্যটক না এলে ট্যুর গাইডদের কম বুকিং থাকে। তবে হোটেল রিসোর্টগুলো ভালো আগাম বুকিং পেয়েছে।
পর্যটন সেবা সংস্থার সভাপতি ও গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের মালিক সেলিম আহমেদ বলেন, শ্রীমঙ্গলের রিসোর্টগুলো বেশির ভাগই শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে। সবাই আগাম বুকিং দিয়ে দিয়েছেন। ৭ থেকে ১৫ তারিখের জন্য পর্যটকেরা আগাম বুকিং দিয়ে রেখেছেন। আমরা আশা করছি, ঈদের লম্বা ছুটিতে চায়ের রাজ্যে প্রচুর পর্যটকের সমাগম হবে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল জোনের ওসি মো. কামরুল হোসেন চৌধুরী জানান, পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি বেশ লম্বা থাকায় প্রচুর পর্যটক সমাগম হবে। ইতেমধ্যে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সভা হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি দর্শনীয় স্থানে নজরদারি রাখা হচ্ছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ থানার পুলিশ, র্যাব সাদাপোশাকে এবং ট্যুরিস্ট পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় থাকবে। পর্যটকেরা যেন নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরা করে সুন্দরভাবেই বাড়ি ফিরতে পারেন, সেভাবেই নিরাপত্তাব্যবস্থা তৈরি করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ঈদের ছুটিতে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলা পুলিশ, থানা-পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করবে। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি পর্যটনকেন্দ্রে পুলিশ থাকবে, যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।